২৫ বছরেও গোয়ালন্দ পৌরবাসীর জীবনে আসেনি পরিবর্তন
স্টাফ রিপোর্টার:
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বারখ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা একসময় ছিল মহকুমা পর্যায়ের এলাকা। প্রশাসনিকভাবে নানা ধাপে তৃতীয়, দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হলেও পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মানে আসেনি প্রত্যাশিত পরিবর্তন। বরং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ, কমেনি নাগরিক ভোগান্তি।
২০০০ সালের ১৩ জানুয়ারি মাত্র ৪ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ছোটভাকলা ও উজানচর ইউনিয়নের অংশবিশেষ সমন্বয়ে গঠিত হয় গোয়ালন্দ পৌরসভা। বর্তমানে এই পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড ও ৫টি মৌজা রয়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো উন্নীত হলেও বাস্তবিক উন্নয়নচিত্র এখনো হতাশাজনক।রাস্তা ঘাট ও ড্রেনেজে অনিয়ম
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ করানোর কারণে টেকসই উন্নয়ন হয়নি।
বেশিরভাগ কমিশনারই কন্ট্রাক্টর হওয়ায় কাজের মান তদারকিতে ছিল শিথিলতা।ড্রেন নির্মাণে পরিকল্পনার ঘাটতি থাকায় অনেক স্থানে রাস্তার চেয়ে ড্রেনের উচ্চতা বেশি। এতে ঘরের সামনে প্লাস্টার করে রাস্তার প্রসারতা কমে গেছে।
সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ড্রেনের ওপর টাইলস বসানোর কাজ শুরু হলেও অনিয়মের কারণে তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজও বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে, যা নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। পানি সরবরাহে ত্রুটি ও জনদুর্ভোগ সম্প্রতি পৌর এলাকায় নতুন পানির লাইন স্থাপন করা হলেও কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে পানি ছাড়লে বিভিন্ন স্থানে পাইপ ফেটে ঘরে পানি ঢোকে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মোল্লা, বারেক মোল্লা ও উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, বারবার অভিযোগ করেও তারা স্থায়ী সমাধান পাচ্ছেন না। পৌরসভা শুধু সাময়িক মেরামতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক কাঠামো
২০২৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, গোয়ালন্দ পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ৩৭,৮০২ জন। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা ১৮,৩৭৪ জন পুরুষ ৯,০৯৬ এবং মহিলা ৯,২৭৮।
গোয়ালন্দ পৌরসভা গঠনের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালে মো. নুরুজ্জামান মিয়াকে প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেন।এরপর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম ইদ্রিস আলী শেখের ছেলে শেখ মো. নিজাম মেয়র নির্বাচিত হন এবং একটানা তিন মেয়াদে প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
২০২১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মণ্ডল মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পৌরসভার ২৫ বছরের যাত্রায় দৃশ্যমান উন্নয়ন খুবই সীমিত। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে রাস্তায় জমে থাকে নোংরা পানি।
যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত, খুলনা মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অনিয়ন্ত্রিত ময়লার ভাগাড়।
অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা, সেতু ও কালভার্টের অবস্থাও নাজুক।
পর্যাপ্ত সড়কবাতি নেই, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ঘাটতি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার দুর্বলতায় নাগরিক জীবন আজ চরম দুর্বিষহ।
পৌরবাসীর প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় ক্লান্ত গোয়ালন্দ পৌরবাসী এখন চায় বাস্তব উন্নয়ন ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন।তাদের দাবি কাগজে নয়, বাস্তবে দেখতে চায় উন্নয়নের ছোঁয়া।স্বচ্ছতা, পরিকল্পিত উদ্যোগ ও নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে গোয়ালন্দ পৌরসভাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য শহরে রূপান্তরিত করা সময়ের দাবি।