স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান নানা অভিযোগ ও অসন্তোষের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে আয়োজন ঘিরে বৈষম্য, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ওঠে অংশগ্রহণকারীদের একাংশের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
৮১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী মাইকে অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা ২৭ জন টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছি এবং ২৭টি কুপন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাবার পেয়েছি মাত্র ২১ জন, তাও আবার আংশিক। বিষয়টি আয়োজক কমিটিকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা খাবার প্রত্যাখ্যান করছি।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, অনেক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নমানের ও পর্যাপ্ত নয় এমন খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি ব্যাচ প্রকাশ্যেই খাবার গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে। অনুষ্ঠানের অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা। আমন্ত্রণপত্র বিতরণ, আসন ব্যবস্থা, বক্তব্য প্রদানের সুযোগ এবং সামগ্রিক অনুষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলিত হওয়ার আনন্দ এসব কারণে অনেকের কাছেই ম্লান হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, এই বিদ্যালয় আমাদের আবেগ ও স্মৃতির জায়গা। ৮০ বছর পূর্তি এমন একটি আয়োজন, যেখানে সবাই সমান মর্যাদা পাবে এটাই প্রত্যাশা ছিল।
কিন্তু বাস্তবে আমরা তার প্রতিফলন দেখিনি। এদিকে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠানসংক্রান্ত একাধিক যোগাযোগ গ্রুপে আর্থিক হিসাব চাওয়া হলে কিছু সিনিয়র সমন্বয়ক গ্রুপ ত্যাগ করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনায় অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, অনুষ্ঠানে একাধিক স্পন্সর থাকলেও কে কত টাকা বা কী সহায়তা দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত চাঁদার অর্থ কোথায় ও কীভাবে ব্যয় হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
হিসাব প্রদানে গড়িমসিকে তারা দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে দ্রুত স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশের দাবি জানান। অন্যদিকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খাবারের কোনো ঘাটতি ছিল না; মূলত ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে সবাইকে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেন। আর্থিক হিসাব সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, হিসাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে এবং এখনো কিছু বকেয়া পরিশোধের প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। সব পরিশোধ সম্পন্ন হলে পূর্ণাঙ্গ হিসাব দ্রুত প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সীমিত পরিসরে বড় একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে, তবে উত্থাপিত অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় রাজবাড়ী জেলার অন্যতম প্রাচীন ও সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক। তবে নানা অভিযোগ ও অসন্তোষের কারণে বহুল প্রত্যাশিত এই আয়োজন শেষ পর্যন্ত বিতর্কের রেশ রেখেই শেষ হলো।