স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম তেনাপঁচা এলাকায় খাল পারের রাস্তাসহ বসতভিটা ধ্বসে যেতে শুরু করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ অপরিকল্পিত খাল খননের ফলেই খালপাড়ের কাঁচা-পাকা রাস্তা ও ঘরবাড়ি ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্হানীয়রা।এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে,খাল খননের জন্য নয়, বরং খালের উপর অপরিকল্পিত ভাবে ব্রীজ নির্মাণের কারনে এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে গতবছর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নে পদ্মা নদী হতে বয়ে আসা ফরিদপুর পর্যন্ত দীর্ঘ খালটি খনন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু খননকালে খালের অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত ঢাল রাখা হয়নি।এছাড়া ব্রীজসহ বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ স্হানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিও ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও সে সব করা হয়নি।এতে করে চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই খাল দিয়ে তীব্র স্রোত প্রবাহিত হতে থাকায় খালের বহু স্হানে দুই পাড়ে ধ্বসের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার সরেজমিন দেবগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম তেনাপঁচা ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাল দিয়ে প্রচন্ড গতিতে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ইতিমধ্যে সেখানে অনেকটা এলাকা জুড়ে ধ্বসে গেছে। গ্রামের লোকজনের চলাচল করা ও গোরস্তানে লাশ নিয়ে যাওয়ার একমাত্র কাঁচা রাস্তাটির অনেকাংশ ধ্বসে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। খালের উপর দিয়ে যাওয়া আরসিসি ব্রীজের পাশ থেকে মাটি ধ্বসে যাওয়ায় ব্রীজের কার্পেটিংসহ অনেকটা অংশ দেবে গেছে। এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা তৈরি হয়েছে।
আলাপকালে ভুক্তভোগী ইসলাম সরদার (৪৮) বলেন,গত বছরও খালটি তার ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্ত্বে ছিল।ঘরের পাশ দিয়ে গ্রামের লোকজনের চলাচলের জন্য বেশ চওড়া একটা কাঁচা রাস্তা ছিল।কিন্তু ঢাল না রেখে খাড়াখাড়ি খাল খনন করায় এবার মাটির রাস্তাসহ তার ঘরের ভিটার অনেকটা ধ্বসে গেছে। এখন বাধ্য হয়ে ঘরটা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে। এই গ্রামে তার মতো আরো ১০/১২ টি পরিবারের ঘরবাড়ি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
গ্রামের গৃহবধূ ঝরনা বেগম (৪০) বলেন,আমরা খুবই গরিব মানুষ। বিপদের মুখে থাকলেও ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও তাদের নাই।
আইয়ুব সরদার (৫২),মোহন মোল্লা (৬০),ইসলাম সরদার (৫০)সহ অনেকেই বলেন,গত বছর আমাদের এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার জন্য কয়েকটি ট্রাক ভর্তি করে বালু আনা হয়েছিল।কিন্তু ১’শ এর মতো বস্তা ফেলার পর সমস্ত বালু ও বস্তা এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।ঠিকমতো বস্তা ফেললে আজকে আমাদের এ ভাঙ্গন ও ধ্বসের মুখে পড়তে হতো না।
এ বিষয়ে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনাস্হল সরেজমিন দেখেছি।ভাঙ্গন ও ধ্বসে যাওয়া এলাকায় দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও গোয়ালন্দের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল সরদার জানান, খাল খনন সঠিক নিয়মের মধ্যেই করা হয়েছে।
এ কাজে জিও ব্যাগ, সিসি ব্লক বা এমন কিছুর জন্য বরাদ্দ ছিল না।খালের পাড় ঘেষে রাস্তা তৈরি বা ঘরবাড়ি তৈরির বিষয়ে আমরা আগে থেকেই নিষেধ করেছিলাম।কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।খালের চওড়া অনুপাতে ব্রীজ সঠিক মাপে না করে ছোট করে তৈরি করায় পশ্চিম তেনাপঁচা এলাকায় তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রীজটি বাকা করে তৈরি করায় স্রোত গিয়ে সরাসরি লাগছে বসতভিটার দিকে।এতে সেখানে ভাঙ্গন ও ধ্বসের সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও জনস্বার্থে কি করা যায় আমরা দেখব।