স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে প্রভাবশালী মহল উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে মরাপদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাদে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এতে করে পদ্মা পাড়ের কৃষিজমি ও স্থানীয়দের বাড়ীঘর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাটিখেকো ওই প্রভাবশালীরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে তাদের অবৈধ মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ক্ষমতাশীল দলের কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি করে প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে ওই অবৈধ মাটি ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে ও শুষ্ক মৌসুমে স্কেভেটর দিয়ে তারা মাটি খনন করে থাকে। এভাবে ওই মহল সারাবছর অবৈধ ব্যবসা করে চলেছে। মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতে ওই চক্রের ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ভেঙ্গে অকেজো করে দিলেও থামছে না তাদের অবৈধ ব্যবসা। এতে করে সাধারন কৃষকের ফসলি জমি,বাড়ীঘর, কাঁচাপাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তাদের কিছু যায় আসে না।
অনুসন্ধানকালে শনিবার দেখা যায়, পদ্মা নদী থেকে সৃষ্ট উপনদীর (মড়াপদ্মা) গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিনের কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসানো রয়েছে। ওই মেশিনে মাটি উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে উপজেলার ৪-৫ কিলোমিটার দুরে বিভিন্ন কাজের যোগান হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। মাটি বিক্রি করে তারা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। অথচ মাটি খনন করায় প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক ও স্থানীদের বাড়ীঘর ও গ্রামীণ সড়ক।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ২ নং বেপারী পাড়ায় ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ সময় ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জয়নদ্দিন ফকীর, বারেক শেখ, আছিয়া বেগম, সামেলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে বেপারী পাড়ার কাদের ফকির, জটুমিস্ত্রী পাড়ার নিজামের ছেলে রফিক, একই এলাকার মুক্তার শেখ ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন করছে। তারা কোন বাধা মানছে না। এ ব্যাপারে তারা গোয়ালন্দ উপজেলা ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাতেও ড্রেজারে মাটি উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন ৭নং ওয়ার্ড তেনাপচা কাওলজানি গ্রামের পাশে নতুন পাড়ার পিয়ার আলীর মোড়ে মড়া পদ্মায় একই কায়দায় ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন করে প্রায় ৫ কিলোর দুরে ছোটভাকলা ইউনিয়নে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সময় দেখা যায়, রাস্তা ও খালবিল পাড়ি দিয়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় মাটির উপর পাইপ বসিয়ে তার ৫টি স্যালো মেশিন বসিয়ে কাটাখালি বাজারের কাছে জালালের দোকানের পাশে ইউনুছ নামে এক ব্যক্তির খাল জমি ভরাট করা হচ্ছে। এ সময় শহিদ শেখ নামে এক ব্যক্তি জানান, রফিক, হীরা, মফিজ ও মামুন শেখ সহ কয়েকজন মিলে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালীর নেতার সহযোগিতায় ওই ড্রেজার পরিচালনা করেন। শহিদ শেখ আরো জানান, প্রায় তিন মাস আগে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে ওই ড্রেজারের সব পাইপ ভেঙ্গে দিয়েছিল। আবার নতুন করে পাইফ সেট করে মাটি উত্তোলন করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড্রেজার পরিচালনাকারী রফিক মুঠোফোনে বলেন, মরাপদ্মায় জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে আমরা উত্তোলন করছি। এটা আমাদের কোন অবৈধ ব্যবসা নয়। তাছাড়া আমরা দীর্ঘদিন মাটির ব্যবসা করলেও কারো কোন ক্ষতি করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রেজারে মাটি উত্তোনের অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হয়। এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তফা মুন্সি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজারে মাটি উত্তোলনের কথা আমি শুনেছি। এমনিতেই ওই জমিগুলো নদী ভাঙন এলাকা। ড্রেজারে মাটি তোলা হলে ফসলি জমি আরো নদীতে চলে যাবে। এটা মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসিল্যান্ড সাহেবকে আমি বলব।