বর্তমানে সরকার গত বছরের এই সময়ের চেয়ে ৪ লাখ টন বেশি। অথচ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। সরকারি হিসাবেই রাজধানীতে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি বাড়ার দাবি ভোক্তাদের।
বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মাসে (আগস্ট) শুল্ক কমিয়ে সাড়ে ১৬ লাখ টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রক্রিয়া শেষে চলতি মাসের শেষ বা আগামী মাসের শুরুতে আমদানির চাল বাজারে আসবে, তখন দাম কমবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের বোরো সংগ্রহ অভিযান প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে। ধান কিছু কম হলেও চালের টার্গেট পূরণ হয়েছে। সরকারি মজুদ বাড়াতে বেসরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমান মজুদও পর্যাপ্ত। আমদানির চাল বাজারে এলেই দাম আরও কমে যাবে।
তা ছাড়া বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি দেখভাল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ’ জানা গেছে, ২২ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, দেশে বর্তমানে (২১ এপ্রিল) খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ৪ লাখ ৬৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৩ লাখ ১০ হাজার টন, গম ১ লাখ ৫৮ হাজার টন। গত বছর এই সময়ে মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৭৬ হাজার টন। বৈঠকে অর্থ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ মজুদকে আশঙ্কাজনক কম বলে মন্তব্য করা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান, ‘চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে মিলারদের থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকের থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে। চালের মানের বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। সঠিকতা বজায় রেখে ৪০ শতাংশ আর্দ্রতার চাল ও ধান কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
’
ধান কেনার লক্ষ্য অর্জন না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তাদের চিঠিও দেয় খাদ্য অধিদফতর। এতে সুফল আসে বোরো সংগ্রহ অভিযানে। ৩১ আগস্ট অভিযান শেষে দেখা গেছে সাড়ে ৬ লাখ টন ধানের মধ্যে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৪৫ টন সংগ্রহ হয়েছে। পাশাপাশি সাড়ে ১১ লাখ টন চালের মধ্যে সিদ্ধ ও আতপ মিলে প্রায় শতভাগ টার্গেট পূরণ করেছে খাদ্য অধিদফতর। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৯ সেপ্টেম্বরের তথ্যানুযায়ী সরকারি গুদামে মজুদ রয়েছে ১৮ লাখ ১৪ হাজার টন চাল। গত বছর এ সময় মজুদ ছিল ১৪ লাখ ১১ হাজার টন। অর্থাৎ বর্তমান মজুদের চেয়ে ৪ লাখ টন কম ছিল।
এমন পরিস্থিতিতেও কমছে না চালের দাম। সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যমতেই গত এক সপ্তাহে বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ৯ সেপ্টেম্বরের তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে সরু চাল গত এক সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে সাড়ে ৩ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ৬৫ টাকার সরু চাল এ সপ্তাহে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাস্তবে ভালো সরু চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায় মিলছে বলে জানিয়েছেন অনেক ভোক্তা। রামপুরা বউবাজারের বাসিন্দা আবদুল ওয়াহাব জানান, বাজারে মানসম্মত সরু চাল কিনতে হলে কেজিপ্রতি ৭২ থেকে ৭৪ টাকা গুনতে হয়। প্রায় অভিন্ন বক্তব্য খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ক্রেতা সাখাওয়াত হোসেনের। তিনি জানান, ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল আর ৭৫ টাকার নিচে ভালো চিকন চাল পাওয়া যায় না। সরকারি মজুদ বাড়াতে এবং চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টন সিদ্ধ ও ১ লাখ ৯৭ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ১২ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে এনবিআর। এ সুবিধা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর চাল আমদানিতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানি করা চালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানা থাকতে পারবে বলে বরাদ্দের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করতে হবে। তবে এলসি খোলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের সময় বাড়িয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্রঃবাংলাদেশ প্রতিদিন