মোহাম্মদ আলী ||
ভার্চুয়াল জগৎটা বেশিদিনের না হলেও বর্তমানে তা চরম আগ্রাসীরুপ ধারণ করেছে। কাজের ব্যস্ততায় সমাজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বা আমজনতার সাক্ষাৎকার নেয়া আগের মতো এখন আর না হলে ও সম্প্রতি (৫০/৫৫) জন স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে দুলাইন লেখার সাহস দেখালাম :
আমেরিকান/পাশ্চাৎ সমাজে পর্নোগ্রাফী বা লিভ টুগেদার বহু আগের বাস্তবতা হলেও আমাদের সমাজে ব্যাপক আকারে সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকা মারফত এরকম বহু ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছি সে প্রেক্ষাপটে আমি আজ যাব না।
যুগের চাহিদা মেটাতে বা সন্তানের আবদার পূর্ন করতে অনেক অভিবাবকই এখন সন্তানের হাতে অ্যান্ড্রয়েড/আধুনিক মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন কিন্ত বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে প্রথম কয়েকদিন অন্ধকার জগৎ এর দেখা না পেলেও সমাজ/বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে জেনে একবার যখন সে পর্নো জগতে ঢুকে যাচ্ছে সে আর এখান থেকে বের হতে পারছে না। দুষ্ট চক্রের মতোই সে ঐ চক্রে ঘুরছে। কয়েকজন তরুন (সপ্তম/অষ্টম শ্রেণি) তাদের ভাষ্যে জানিয়েছে এখন তারা নিয়মিত পর্নো সাইটে না গেলে রাতে ঘুম হয় না বা বন্ধুদের সাথে পর্নো ভিডিও শেয়ার না করলে বন্ধু মহলে দাম উঠে না ।
আর একজন মেয়ে (কলেজ পড়ুয়া) জানিয়েছে অন্ধকার জগত তাকে মাইগ্রেনের মত চিরস্থায়ী সমস্যা উপহার দিয়েছে ! অনেকক্ষেত্রে বাবা মার উদাসীনতার সুযোগে বা সন্তানকে সরল বিশ্বাসের কারনে ছেলে-মেয়েরা পর্নো জগতে ঢুকে যাচ্ছে এবং বিকৃত মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠছে। একসময় চটি গল্পের বইয়ের রমরমা বানিজ্য থাকলেও এখন অ্যান্ড্রয়েড/আধুনিক মোবাইল আসায় তার কাটতি নেই বললেই চলে। জগৎ খ্যাত প্লে বয় পত্রিকাও এখন শুধু অনলাইন ভার্সনে চলে।দুজন স্কুল শিক্ষক দঃখের সাথে জানিয়েছেন যে, তার স্কুলে হর-হামেশাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছেলে-মেয়েরা লুকিয়ে লুকিয়ে পর্নোগ্রাফী দেখে বা এই আলোচনায় মত্ত হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক(আমার শিক্ষক)সৈয়দ আহমেদ খান বলেছিলেন “যৌনতা বিষয়টা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হলেও তার চিরন্তন আদিম রুপ একই, হোকনা সে ক্যালিফোর্নিয়ার সি বিচে বা আমার গ্রাম বাংলার চিরসবুজ মাঠে।তবে তা অবশ্যই সুনির্দিষ্ট এইজ গ্রুপের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকতে হবে” সে প্রেক্ষিতে বলতে গেলে আদিম বিষয় থাকবেই তবে তা এখন যুব সমাজকে গিলে ফেলেছে ফলশ্রুতিতে যা হচ্ছে তা হলো পড়াশোনায় ও জাগতিক অন্যান্য কিছুর প্রতি বিমুখ হয়ে যাওয়া,ভালকিছুর চিন্তা করতে না পারা,স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া,দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়ে চশমার আশ্রয় নেয়া,সেক্সুয়াল ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া,পারিবারিক অশান্তি ও বিকৃত মনমানুসিকতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ধর্ষনের মতো জঘন্য ঘটনার সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্ট করে ফেলা যা প্রতিনিয়ত আমরা প্রত্যক্ষ করছি ।এগুলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভিমত হিসেবে পাওয়া গেছে।
বর্তমানে সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স যা হচ্ছে তাতে যে এই পর্নোগ্রাফির অপসংস্কৃতি একটা বিরাট ভূমিকা রাখছে তা আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন গবেষনায় প্রমানিত,আমাদের বর্তমান তরুন সমাজ ও তার শিকার মর্মে প্রতীয়মান।
পর্নোসংস্কৃতি তরুন সমাজের মধ্যে বিকৃত রুচির বিকাশ ঘটাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে সমগ্র সমাজব্যবস্থায় একটা পচন ধরেছে । মাদকাশক্তির মতো ভয়াবহ এ নেশা তরুন সমাজকে চরম অশুভ পথে নিয়ে যাচ্ছে ।এক তরুনের ভাষ্যমতে,বাবা-মা ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে বাবার বালিশের নিচ থেকে বাবার মোবাইল নিয়ে ছাদে গিয়ে মধ্যরাতে পর্নোগ্রাফি দেখছে অথচ গুনাক্ষরেও তার বাবা-মা জানতে পারছে না বা এতটুকু সচেতন হতে পারছে না ।অন্য দুজন তরুন জানান তাদের ছুটির দিনগুলির বেশিরভাগ সময় পর্নো সাইট দেখেই কাটে এবং সুযোগ পেলেই তারা এ নিয়েই থাকে । সামগ্রিকভাবে পর্নোগ্রাফি/অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল তথা ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের প্রজন্মটাকে শেষ করে দিচ্ছে ।চিরসবুজের নতুন আবাহন এখন আর তাদের জাগায় না বা নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করেনা । অপসংস্কৃতির খপ্পরে পড়ে এখন তারা ধ্বংসের চরমঘোরে দিনাতিপাত করছে এ অবস্থা থেকে উত্তরনের সর্বশেষ সময়টুকু এখন যাচ্ছে । তরুন সমাজকে রক্ষায় রাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রত্যেকটা পরিবারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে । অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ন হওয়ার আগে ফেসবুক/অন লাইন জগতে তাদের কার্যক্রম সার্বক্ষনিক মনিটরিং করতে হবে । বলা বাহুল্য, জোর-জবরদস্তিতে এ কাজ হবে না, কোনোদিন হয়ওনি । এটি বাবা-মাকে বুঝতে হবে, প্রত্যেকটি বাবা-মা-গার্জিয়ানকে তাদের সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে তার সহযোগী বন্ধু হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যান চিন্তায় এ সংস্কৃতি থেকে বের করে আনতে হবে ।জোর করলে এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে জোর করার যুগ এখন আর নেই, গত হয়েছে বহু আগেই।
সময় ডাকে আমাদের পচনশীল এ সংস্কৃতি থেকে তরুন প্রজন্মকে বের করে নিয়ে আসতে ।
এরাই যে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ হবে, কি বলেন আপনারা একটু সাড়া দেন তো, পজিটিভ সাড়া যা চিরজীবন পৃথিবীর ইতিহাসকে বদলে দিয়ে যাচ্ছে,প্রগতির পথে,সত্য-সুন্দরের পথে আমরা সবাই তো তারই পূজারী নাকি ?
(লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাত্তন শিক্ষার্থী, বর্তমানে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত)