স্টাফ রিপোর্টঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ২ নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া সুলতান শিকদার (৩২)-এর এখনও সন্ধান মেলেনি। তিনি গত বুধবার (২৩ আগষ্ট) নদীতে গোসল করতে নেমেছিলেন। সে দৌলতদিয়া ২ নম্বর ফেরি ঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজী পাড়ার আহম্মদ শিকদারের ছেলে।
নিখোঁজের ৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শ্রমিক সুলতানের। পরিবারের পক্ষ থেকে রবিবার পর্যন্ত অনেক খোজাখুজি করে ব্যার্থ হয়েছেন তারা। খুঁজে না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছে তার পরিবার।
সুলতান শিকদারের খালাতো ভাই চান্দু মোল্লা জানান, সুলতানের মা ও স্ত্রীসহ দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। সুলতান প্রতিদিন ফেরি ঘাট এলাকায় কার্গো থেকে মাল নামানোর কাজ করতেন সুলতান । এতে যে আয় হত তা দিয়ে চলতো তার সংসার। আমরা সুলতানের সন্ধানে সম্ভব্য সব স্থানে খোঁজ করছি।
তবে নিখোঁজের ৫ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় তাঁকে জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে রবিবার পর্যন্ত অনেক খোজাখুজি করা হয়েছে। খোঁজ না পেয়ে এখন খোঁজা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মোবাইল নাম্বার দিয়ে এসেছি। কেউ কোনো সন্ধান পেলে আমারা জানতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাই একজন শ্রমিক। তিনি কাজ না করলে তার সংসার চলে না। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি তার পরিবারের পাশে আসেনি।করেনি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। এবংকি এখনও পর্যন্ত মেলেনি কোনো সরকারি সহায়তার আশ্বাস।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, সুলতান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে প্রশাসনের পাশাপাশি আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে তাকে খোঁজা হয়েছে।আমি নিজস্ব অর্থায়নে লোক দিয়ে তাকে খোজাখুজি করিয়েছি। আমার পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর নিখোঁজ পরিবারের সরকারি সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে একটা দরখাস্ত জমা দেয়া হবে। খুব শীঘ্রই তার পরিবার সরকারি সহায়তাসহ আমাদের সহায়তা পাবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ আগষ্ট) সন্ধ্যার দিকে কাজ শেষ করে বাড়িতে যায়। এ সময় দুই মেয়ে পরাটা খাওয়ার আবদার করলে স্থানীয় একটি হোটেল থেকে পরাটা কিনে দিয়ে পদ্মা নদীতে গোছল করতে নামেন। অনেকক্ষণ হলেও বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়ে।
এসময় স্থানীয় এক ব্যক্তি নদীর পাড়ে মুঠোফোন বাজতে দেখে কাছে গিয়ে ফোনটি ধরেন। এসময় বিপরিত পাশ থেকে তাঁর স্ত্রী জানান, এটি সুলতানের ফোন, সে কোথায় জানান? তখন তিনি জানান, নদীর পাড়ে জিওব্যাগের ওপর অনেকক্ষণ ধরে রিংটোন বাজতে দেখে ফোনটি ধরেছি। সাথে কিছু টাকা পড়ে আছে।
তখনই পরিবারের সবাই বুঝতে পারেন তিনি গোছল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছেন। এ সময় খবর পেয়ে অন্যান্য শ্রমিকরাও সুলতানকে নদীতে খোঁজ করতে থাকে। তবে অন্ধকার বেশি হওয়ায় সুলতানের সন্ধান পাননি। সুলতানের সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করেন।
রাত ৮টার দিকে এমন খবর পাওয়ার পর দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি এবং গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে খবর দেয়া হয় । নৌপুলিশ ঘটনাস্থল দেখে ঘুরে যান। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে রাতে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব না, সকালে দেখবেন বলে চলে যান।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগষ্ট) সকালে রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের উপসহকারী পরিচালক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে পাটুরিয়া থেকে ৬ সদস্যের ডুবুরি দল এসে অভিযান শুরু করে। তীব্র স্রোতের কারণে অভিযান ব্যাহত হয়।
এসময় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টার সময় তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস।