রাজবাড়ী প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়া-ঢাকা মহাসড়কের রাজবাড়ী জেলার শ্রীপুর এলাকার বাস টার্মিনালে পাশে পৌরসভার ময়লার স্তুপের ফলে সৃষ্টি হয়ছে জনদুর্ভোগের। ঢাকা এবং দক্ষীণবঙ্গ থেকে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় ঢোকার সম্মুখে এই ময়লার স্তুপ থেকে আসা দূর্গন্ধে যেমন এসব জায়গা থেকে আসা মানুষের কষ্ট আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এলাকাটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ বারবার পৌরসভাকে জানিয়েও কোন লাভ হয় নি তাদের। এই ময়লার স্তুপের কারনে তাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানান, এই পুরো এলাকাটি এখন দূষিত হয়ে গেছে। এখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
ময়লার স্তূপের প্রায় ২০ গজের মধ্যে বসবাস করেন সত্তোর উর্দ্ধ আহাদ শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। দুর্গন্ধের কারণে আমার দুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বাড়ির কেউ ঠিকমতো খেতে, বসতে পারি না। ছেলে-মেয়েদের জানালা-দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করতে হয়।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন বলেন, ‘এই সড়কটি ব্যবহার করে এই এলাকার মানুষ প্রতিদিন বাজারে,মসজিদে যায়। কিন্তু এই ময়লার স্তুপের দূর্গন্ধে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয় নি।’ তিনি আরো বলেন,আপনাদের(সংবাদ মাধ্যম) মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান যেন তাড়াতাড়ি করে।
ইমরান নামে আরেকজন বলেন, ‘মেডিকেল বর্জ্য সহ পুরো রাজবাড়ী পৌরসভার ময়লা এনে এখানে ফেলানো হয়। কয়েকদিন আগে মরা কুকুর এনে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল। এর ফলে আমরা যারা স্থানীয় রয়েছি তাদের খাবার খেতে,ঘুমাতে এবং এক কথায় বসবাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ডেঙ্গুজ্বর সহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে ভুগছে অনেকেই।’
মো: ইমন নামে কলেজ পড়ুয়া একজন স্থায়ী বাসিন্দ অভিযোগ করে বলেন,’ এই ময়লার ফেলার জায়গা আরো পিছনে হলেও,এই মহাসড়কের পাশে ফেলায় এখান দিয়ে যাতায়াতকারী সকলরেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কোন পথচারী যখন যায় তখন তাকে নাকে কাপড়/হাত দিয়ে যেতে হয় আর আমরা যারা স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছি তাদের তো দুর্ভোগ সীমাহীন। এই ময়লার স্তুপের কারনে মশার অত্যাচারে সন্ধ্যার পরে ঘরে থাকায় মুশকিল হয়ে পড়ছে।এছাড়া স্তুপের অনেক ময়লায় মহাসড়কে চলে আসার ফলে মাঝে মাঝেই ছোটখাট দূর্ঘটনা ঘটছে এই জায়গাটিতে।’
স্থানীয় সমাজ কর্মী এবং সাংবাদিক নেহাল আহমেদ বলেন, আমার জানামতে এরকম ময়লার স্তুপ সাধারণত পৌর এলাকার বাইরে এবং জনবিছিন্ন একটি জায়গায় করা হয় থাকে তবে,রাজবাড়ীতে সেটি হয় নি। আমি আশ্চর্য হয়, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মহাসড়কের পাশে কিভাবে ময়লার ভাগাড় তৈরি করা হয়েছে! এখান দিয়ে যখন হেটে যায় তখন জন্মদিনের ভাত পেট থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়।’
তিনি জনপ্রতিনিধি এবং জেলার সচেতন মহলের দৃষ্টিআকর্ষণ করে বলেন, “আমাদের সকলের এইদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো মহাসড়কের পাশের এই ভাগাড় সরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা এবং এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সুস্বাস্থ্য পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে।”
ময়লার স্তুপের ফলে জনদুর্ভোগের কথা জানালে রাজবাড়ী পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মল কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা পৌরসভার নির্দিষ্ট জায়গা।পিছনের দিকে আমাদের ইজি প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে,সেটি সম্পন্ন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে, মহাসড়কের ওপর ময়লা চলে এসেছে এরকম তথ্য আমার জানা নেই। আমরা ময়লার ফেলার পরই তা ভ্যাকু মেশুন দিয়ে সরিয়ে ফেলি কারণ বর্ষা মৌসুমে ময়লার গাড়ি বেশিদূর যেতে পারে না। তাছাড়া কেরোসিন তেল ও বিল্সিং পাউডার দিচ্ছি। মাঝেমধ্যে আগুন দিয়েও বর্জ্যগুলো পোড়ানো হয়।’