মোঃ সজল আলী, মানিকগঞ্জ:
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বপ্নের ঘরে সাড়ে তিন মাসের ফাটল ধরেছে। এ নিয়ে সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের খলিশাডোহরা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের আনন্দে চীর ধরেছে। চাপাক্ষোভও বিরাজ করছে নতুন ঘরের বাসিন্দাদের মাঝে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ১৭ জন উপকারভোগীর জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। সারাদেশে একযোগে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে ঘরগুলোর চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সার্বিক তদারকিতে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম। ঘরগুলোর নির্মাণ কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগে বরাইদ ইউনিয়নের সচেতন মহলের সাথে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয় সাইফুল ইসলামের। ঘর নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম তড়িঘড়ি করে ফাটলগুলোতে প্রলেপ দিয়ে মেরামত করেন। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ঘরগুলো নির্মাণ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ঘরের উপকারভোগীরা ঘর বুঝে পাওয়ার পর বসবাসের উপযোগী করতে নিজেদের টাকা খরচ করেছে। এই ঘরগুলো নির্মাণকালে স্থানীয় সরকারের ৪০ দিনের কর্মসূচীর লোক দিয়ে কাজ করানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পশ্চিম পাশের ঘরগুলোর সামনে বড় ডোবা রয়েছে। প্বার্শবর্তী সমতল ভূমি থেকে নামমাত্র উচ্চতার ভিটি করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকগুলো ঘরের বারান্দা ও মূল ঘরের ছাউনির সংযোগের মধ্যে ফাঁক রয়েছে। এছাড়া ৮ নং ঘরে তিনটি ফাটল, ৫ নং ঘরের পিলারের উপরের অংশে ফাটলসহ বেশ কিছু ঘরে ব্যবহৃত কাঠ বাঁকা হয়ে পড়েছে। কিছু ঘরে ফাটল দেখা দেয়ায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম কোনরকম প্রলেপ দিয়ে ফাটলগুলো মেরামত করা হয়েছে। উপজেলার ১৭ জন উপকারভোগীর মধ্যে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও অল্পকয়েকটি ঘরে লোকজন বসবাস করে।
১ নং ঘরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রেখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আমরা মহাখুশি। কিন্ত আমার ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ঘরের তিনটি জানালাই অকেজো হয়ে পড়েছিল। পরে সাইফুল ইসলাম এসে ঝালাই করে দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। আবার দেওয়ালেও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ঘরে নির্মানে অনিয়মের কথা তুলে ধরায় এসিল্যান্ড পুলিশ নিয়ে এসে আমাকে তার অফিসে নিয়ে গিয়ে শ্বাসিয়েছে।
আন্না রাণী নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতরে পানি পড়ার কারণে ঘুমানোর স্থানে বালতি বসিয়ে রাখতে হয়।
৪ নং ঘরের বাসিন্দা আয়নাল আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বালিয়াটি ইউনিয়ন থেকে আমাদের ১৫ জনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম বালিয়াটি এলাকায় ঘর দেওয়া হবে। ঘরে উঠার সময় তিন হাজার টাকা খরচ করে মাটি ফেলে উঠানের সামনে ভরাট করেছি। আমার ঘরের বারান্দা এবং চালের ছাউনির সাথে অনেক ফাঁক রেখেই ঘর বানিয়েছে। অপর ঘরের বাসিন্দা পাপন মিয়াও উঠানের সামনে ৩ হাজার টাকা খরচ করে মাটি ভরাট করেছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল ধরার কথা সবীকার করে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, যে সব ঘরে ফাটল কিংবা নির্মান ত্রুটি রয়েছে সেগুলো নির্মান করে বসবাসের উপযোগী করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কিউরিং না হওয়ায় দু’একটা ঘরে ফাটলের মত দেখা যায়। একটি ঘরের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিলে গতকাল লোক পাঠিয়ে মেরামত করে দেয়া হয়েছে। সিডিউল মোতাবেক ঘর নির্মান করে উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রেখা নামের কাউকে অফিসে ডেকে এনে শ্বাসানো হয়নি। তার স্বামী বালিয়াটিতে মাছের ব্যবসা করে। এ কারণে তার স্বামী যাতে ওই ঘরে থাকতে পারে এজন্য তাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলেছি। ঘর নির্মাণে মাটি ভরাটের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ নেই। তাই চেয়ারম্যানকে বলে ৪০ দিনের কর্মসূচীর লোক দিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে।