সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ২২ মে
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালী কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে কালিকাপুর মৌজাস্থ এক বৃদ্ধের প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ৪৪ শতাংশ জমি দখল ও ওই বৃদ্ধকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বৃদ্ধ সাহাজদ্দিন শেখ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ মোঃ সাহাজদ্দিন শেখ (৯৫), পিতা মৃত বান্দু শেখ কামারগোনার কালিকাপুর মৌজা আর এস ৬২৩ নং খতিয়ানভুক্ত আর এস ৩৫৭৫ নং দাগের ১৬ আনায় ৪৪ শতাংশ জমির মালিক। দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগ করে আসছিলেন তিনি। কিছুদিন পূর্বে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ অনধিকার প্রবেশ করে ভাড়া করা ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে থাকলে লোক মারফত খবর পেয়ে মোঃ সাহাজদ্দিন শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটতে বাধা দিলে আব্দুল মজিদসহ ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক নিয়ে অভিযোগকারীকে মারধর করে এবং তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বৃদ্ধ চিৎকার চেঁচামেচি করে আশেপাশের লোকজন জড়ো করে এবং জমিতে মাটি কাটার প্রতিবাদ করতে থাকলে তাকে মারধর করে সেখান থেকে তারিয়ে দেওয়া হয়। পরে এই বিষয়টি নিয়ে বারাবারি করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ। অভিযোগে আরো প্রকাশ পায়, বৃদ্ধ সাহাজদ্দিনের জমি থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মাটি চুরি করে বিক্রি করা হয়ছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসা না হওয়ায় প্রশাসন বরাবর প্রায় দুই মাস আগে অভিযোগ করলেও কোন বিচার পায়নি অসহায় বৃদ্ধ।
মোঃ সাহাজদ্দিন শেখের ছেলে মোঃ সামছুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমার বাবা সারা জীবনের কষ্টের টাকায় এই জমিটি কিনেছেন। কিন্তু আব্দুল মজিদ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল দলিল তৈরী করে আমাদের জমি নিজের বলে দাবি করছেন। আমরা কারো কাছে গিয়ে কোন বিচার পাচ্ছি না। দুই মাস আগে আমাদের জায়গায় তাঁরা মাটি কাটার সময় আমার বাবা বাঁধা দিলে তারা আমার বাবাকে মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা থানা ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু সেখান থেকেও আমারা এখনো কোন সাহায্য পাইনি। আমরা প্রশাসনের কাছে আমাদের সকল কাগজপত্র দেখিয়েছি । মজিদ কোন কাগজ দেখাতে পারে নাই। এখন মজিদ তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের নানা সময়ে ভয় দেখাচ্ছে। আমরা ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না’।
অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ বলেন,‘এই জমি অনেক দিন ধরে আমি ভোগ দখল করে আসছি। এই অভিযোগ মিথ্যা। আমি আমার ক্রয়কৃত জমিতে মাটি কেটেছি’।
একই গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ মাতব্বর বলেন,‘আমরা ছোটসময় থেকে দেখে আসছি এই জমিটি সাহাজদ্দিনের। এখন হঠাৎ করে মজিদ কিভাবে এই জমির মালিকানা দাবি করে সেটা জানিনা। তবে তিনি লোক হিসেবে খুব একটা ভালো নয় সেটা জানি। তবে এই গরীব মানুষের জায়গায় হাত দেওয়াটা তার ঠিক হয়নি’।
এলাকাবাসী জানায়, আব্দুল মজিদ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন লোক তাই এমন অন্যায় করতে পারছে। কিছু দিন আগেও তার একটি কাজের জন্য তিনি অপমানিত হয়েছে। আমারা এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মূঈদ চৌধুরী বলেন,এই বিষয়ে একটি অভিযোগ এসেছিলো। এখন এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেখছেন। তবে অভিযোগে যে ১৫ লক্ষ টাকার মাটি কাটার কথা বলা হয়েছে এটা সত্য। আমি যতোটুকু জানি এই জমি সাহাজদ্দিন শেখের। এটা প্রাথমিক ভাবে দলিল দেখে বুঝতে পেরেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ‘বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দুই পক্ষের কাছে কাগজ চেয়েছেন। দুই পক্ষের কাগজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।