আমরা জানি গাছপালা প্রাণীকুলের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান এর যোগানদাতা। উদ্ভিদ অক্সিজেন নামক অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ত্যাগ করে এবং বায়ু থেকে নাইট্রোজেন নামক বিষাক্ত গ্যাস গ্রহণ করে। যার ফলে বায়ুতে একটা ভারসাম্যতা বিরাজ করে, আর এসব গাছপালার লাগানোর মাধ্যমে কিন্তু বনভূমি তৈরি করা হয়। বনভূমি দুই প্রকার যথা, কৃত্রিম বনভূমি, প্রাকৃতিক বনভূমি,। কৃত্রিম বনভূমি হল সেসব বনভূমি যেসব বনভূমি মানুষেরা তাদের প্রয়োজনে তৈরি করে থাকে, অর্থাৎ মানুষের তৈরি বনভূমি হল কৃত্রিম বনভূমি। অন্যদিকে প্রাকৃতিক বনভূমি হলো সৃষ্টি কর্তা কর্তৃক বা প্রাকৃতিক ভাবে যেসব বনভূমি গড়ে উঠেছে তাকে বলা হয় প্রাকৃতিক বনভূমি। এখন বনভূমির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। একটা দেশকে প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বনভূমির প্রজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র রক্ষা করার জন্য বনভূমি ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, কারণ দেশের জীব-বৈচিত্র বেড়ে ওঠার প্রধান আশ্রয়স্থল বনভূমি। বায়ুকে নির্মল করার জন্য বনভূমির দরকার রয়েছে কারণ বায়ুতে যদি অতিমাত্রায় অক্সিজেন থাকে তাহলে বায়ু নির্মল হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও ঝড়-বৃষ্টি সৃষ্টিতে বনভূমি ভূমিকা রয়েছে, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য এই বনভূমি সামনে থেকে দেশকে রক্ষা করে। এতসব প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে এই প্রয়োজনীয় ভূমি রক্ষার ক্ষেত্রে কোন রকম সচেতনতা দেখা যায় না। বনভূমি বিশেষজ্ঞ কতৃক হিসাব অনুযায়ী একটা দেশের জন্য মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সরকারি হিসাব অনুযায়ী যদিও ১৮ ভাগ বনভূমি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা আরও কম ১৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বনভূমি দখল করা হচ্ছে এবং গাছপালা কেটে উজাড় করা হচ্ছে যার ফলে জীব বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। বনভূমি উজাড় করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঘরবাড়ি দোকান এবং কৃষি খামার তৈরি করা হচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ২৩ লাখ হেক্টর এবং বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১৬ লাখ হেক্টর যা দেশের আয়তন এর ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সারাদেশে মোট ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ একর বনভূমির মধ্যে ৮৮ হাজার ২১৫ জনের দখলে রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর। যাদের অধীনে এসব বনভূমি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয় তারা রাজনীতি ভাবে ক্ষমতাবান কিংবা বিত্তশালী। তাদের এমন অবস্থানের কারণে দেশ যে ধীরে ধীরে সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব দখল কারীরা বিত্তশালী হওয়ার ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না,ওইসব বিত্তশালীরা হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। যার ফলে দেশের কথা চিন্তা না করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক লোভ-লালসার ফলে এমন গৃহীত কাজ করছে প্রতিনিয়ত। এসব বনভূমি দখল করার ক্ষেত্রে এমন চিত্র ও দেখা যায় যে বিত্তশালীদের কাছে দেশের প্রশাসন যেন নিরুপায়। দেশে আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ আমরা দেখতে পাই না, যার ফলে বনভূমির পরিমাণ দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী বনভূমি কমে যাওয়ার ফলে দেশ খরা এবং বন্যা সহ যাবতীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে যা আমরা উপলব্ধি করছি। এছাড়াও আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে একটা অংশ গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে বলে যে মত প্রকাশ করেছে, সেটাও বাস্তবায়িত হবে যদি আমরা এখন থেকে বনভূমি রক্ষায় সচেতন না হই।
জাফরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
০১৭৫৪৭৬৪০২৫