করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌরুটে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে মোটরসাইকেলসহ যাত্রী পারাপার চলছে। ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও পুলিশের সামনেই গাদাগাদি করে পারাপার চলছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব কোনোটাই মানা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাটের পন্টুনের সঙ্গে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভিড়িয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা মোটরসাইকেল আরোহীরা ফেরি বন্ধ থাকায় নদী পাড়ি দিতে ট্রলারে উঠছেন। দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌরুটের দূরত্ব চার থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার। এই নদীপথ পাড়ি দিতে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। মোটরসাইকল পার করতে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। লকডাউনে ফেরি বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অন্য সময় ট্রলারে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেলপ্রতি ভাড়া আদায় করা হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সামনেই এভাবে যাত্রীদের বাড়তি টাকায় পারাপার করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একশ্রেণির লোকের মাধ্যমে নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেরির পন্টুনের সঙ্গে নৌকা ঠেকিয়ে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে। প্রতিটি নৌকায় গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। আর প্রতিবার ট্রলার ট্রিপ দেওয়ার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উৎকোচ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রলারশ্রমিক বলেন, প্রতিটি ট্রিপের জন্য প্রতি ঘাট অতিরিক্ত ২’শ থেকে ৩’শ টাকা খরচ হচ্ছে। কোথায় খরচ হচ্ছে, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, সবকিছু কি মুখে বলা যায়? বুঝে নিতে হয়। খরচ না করলে কি লকডাউনের মধ্যে ফেরিঘাট থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো যায়? এ ছাড়া স্থানীয় যাঁরা যাত্রীদের ডেকে নৌকায় তুলে দিচ্ছেন, তাঁদেরও নৌকাপ্রতি আলাদা টাকা দিতে হয়।
মাগুরা থেকে মোটরসাইকেলে গাজীপুর যাচ্ছিলেন তরুণ মিনহাজ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে পরিবহন না চলায় জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছি। কাজ শেষ করে পারলে আজই মাগুরা ফিরতে হবে। ঘাটে এসে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে আছি। উপায় না পেয়ে ট্রলারেই রওনা করছি। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হলেও কিছু করার নেই।’
গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার বিষয়ে ট্রলারচালক মো. মান্নান বলেন, ‘ঘাটের কাছেই আমাদের বাড়ি। লকডাউনে সবকিছু বন্ধ। লোকজন পার হতে পারছে না। কয়েকজন মিলে একটি ট্রলার নিয়ে নেমে পড়েছি।’ তাঁর নৌকায় শতাধিক যাত্রী তোলার কারণ সর্ম্পকে বলেন, ‘এত যাত্রী নেই। যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে পারাপার করছি। আমরা তাদের বরং উপকার করছি। তা না হলে এ সময়ে কীভাবে নদী পাড়ি দিত?’
যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপারের সত্যতা স্বীকার করে দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোন্নাফ মোল্লা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। বুধরার যাত্রী ও যান পারাপারের খবর পেয়ে ঘাটে গেলে আমাদের দেখে তাঁরা পালিয়ে যান। এখন প্রয়োজনে তাঁদের ধাওয়া করতে স্পিডবোট নিতে হবে। নৌপুলিশের কেউ জড়িত থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরিঘাট থেকে ট্রলারে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে বলে জানতে পারি। খবর পেয়ে গত বুধবার ও ঘাটে গেলে ট্রলারচালকেরা যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়। লোকজন যদি করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে কী করার আছে? এরপরও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’