গোয়ালন্দে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিডি কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

ষ্টাফ রিপোর্টার | রাজবাড়ী টেলিগ্রাফ / ১২১২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

0Shares

জহুরুল ইসলাম হালিমঃ
ভিজিডি কার্ডের জন্য অনুমোদিত ৩৮২টি
কার্ডের মধ্যে থেকে প্রায় ৭০/৮০ টি দুস্থ্য নারীর কার্ড জব্দের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভিজিডি কর্মসুচির আওতায় ২০২১-২০২২ সালের গোয়ালন্দ
উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নে ৭৮২ জনের নামের তালিকা অনলাইন আবেদনে জমা পরে। ঐ
আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ৩৮২ জনের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এরপর ইউপি সচিব ও
ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে উপকারভোগীদের হাতে ঐ কার্ড বিতরণ করা হয়। কিন্তু ইউপি
চেয়ারম্যান বিভিন্ন অজুহাতে ৭০/৮০ জন দুস্থ্য নারীর কার্ড ইউপি চৌকিদারদের মাধ্যমে জব্দ করে। এরপর জব্দকৃত কার্ডগুলো তিনি তার পছন্দের ব্যাক্তিদের দিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ কার্ডে দুই বছর বিনামূল্যে প্রতিমাসে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।

এ বিষয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হামিদা বেগম, লিপি খাতুন, হাসিনা বেগম, ফাতেমা বেগমসহ অনেকেই তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে চাল নিতে এসেছেন। সরকারী তালিকাও তাদের নাম রয়েছে কিন্তু বিজিডি কার্ড না থাকায় তারা চাল নিতে পারেননি। এছাড়াও হাছিনা বেগম নামে এক নারী চাল নিতে আসলে দেখা যায় তার কার্ডে নাম লেখা রয়েছে জবেদা বেগম এবং তাছলিমা নামের এক নারী চাল নিতে আসলে দেখা যায় তার কার্ড ও জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম ঠিক থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের সাথে কোন মিল নেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে জবেদা নামধারী হাছিনা বেগম ও তাছলিমা কথা না বলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
ভুক্তভোগীরা বলেন, কয়েকমাস আগে অনলাইনে আবেদন করার পর ইউনিয়ন পরিষদে উম্মুক্ত
যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত হই। সে অনুযায়ী আমাদের নামে কার্ড হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও ট্যাগ অফিসার আমাদের হাতে কার্ডগুলো তুলে দেন । কিন্তু কিছুদিন পর ইউপি চৌকিদাররা চেয়ারম্যানের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে কার্ডগুলো ফেরত নেন। চাল দেয়ার খবর শুনে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছি আমাদের চাল ও কার্ড কোনটাই দেয়নি ।
এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, এসব কার্ডধারীদের
নাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদিত প্রাথমিক তালিকায় ছিলনা। তারা কিভাবে চুড়ান্ত তালিকায় অন্তভূক্ত হলো সেটা যাচাইয়ের জন্য আমি কার্ডগুলো জব্দ করি। প্রকৃত কার্ডধারীদের কার্ড ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি ইউপি সচিব পরিমল কুমার ও উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. সালাম সিদ্দিকীকে নাম পরিবর্তনের জন্য দায়ী করেন। তবে কার্ডে নাম পাল্টে দেয়ার বিষয়ে তিনি কোন সদত্তর দিতে পারেননি।

চেয়ারম্যানের অভিযোগের বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. সালাম সিদ্দিকী বলেন, ছোটভাকলা ইউনিয়নে ভিজিডির জন্য মোট ৭৮২ জন অনলাইনে আবেদন করেন। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও সংরক্ষিত এক নারী সদস্য সিল সাক্ষরসহ ৩৮২ জনকে চুড়ান্ত করে দেন। উপজেলা কমিটি সেই তালিকা অনুযায়ী চুড়ান্ত তালিকা অনুমোদন করে ৩৮২টি কার্ড সরবরাহ করেন। উপজেলা কমিটির চুড়ান্ত তালিকাতেও ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও নারী সদস্য সাক্ষর করেছেন। এ সংক্রান্ত সব নথিপত্র তার দপ্তরে জমা রয়েছে। চেয়ারম্যান যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান
ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হিসাবে উপকারভোগী ৩৮২ জনের নাম চুড়ান্ত করে দিয়েছেন। আমি তারসহ কমিটির সবার সিল সাক্ষর দেখে চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছি। অনুমোদিত কার্ড জব্দ করা বা সেগুলো প্রকৃত দুস্থ্য নারীর পরিবর্তে অন্য কাউকে দেয়ার আইনত কোন সুযোগ নেই এবং তা গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের কয়েকজন নারী আমার নিকটও অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments


এ জাতীয় আরো খবর
NayaTest.jpg