মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব মানে রাত, আর বরাত মানে মুক্তি। সেই হিসেবে শবে বরাত হচ্ছে মুক্তির রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহ পাক মানব জাতির জন্য তার অসীম রহমতের, বরকতের ও মাগফেরাতের দরজা খুলে দেন।
ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভ করার সুযোগ ঘটে এই পবিত্র রাতে। বছর ঘুরে এই পবিত্র রাত আসে সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে।
ইসলাম ধর্মে এই রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। পবিত্র এই রাতে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করলে, আল্লাহ পাকের কাছে নিজের পাপ-গুনাহ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন এবং অনুতপ্ত বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে মাফ করে দেন। ইনশাআল্লাহ।
তাজেদারে কায়েনাত ইমামুল আম্বিয়া হুজুর রাসূলুল্লাহ (দঃ) এই পবিত্র রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতে মুসলমানদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। শবে বরাত সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘জিবরাইল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আপনি আপনার উম্মতদের জানিয়ে দিন, তারা যেন পবিত্র শবে বরাতের রাতকে জীবিত রাখে।’ অর্থাৎ তারা যেন ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাতটি কাটিয়ে দেয়।
মহিমান্বিত এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহ পাকের দরবার পাকে নিজেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র আল-কুরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য।
একইসঙ্গে নিজ পিতা-মাতার জন্য, মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদ পাক গুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। যাহার যেমন শারীরিক সক্ষমতা আছে তিনি সেভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকবেন।
শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি।
পবিত্র শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবীতেঃ
“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাক‘আতাই ছালাতিল লাইলাতিল বারাতি নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।
বাংলায় নিয়তঃ- “ আমি ক্বেবলামুখী হয়ে মহান আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দুই ‘রাক’আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।
শবে বরাতের নামাজঃ
শবে বরাতের নামাজ দু’রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ফজিলাতের ও ছওয়াবের কাজ। এভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।
প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু কালামে পাক তেলাওয়াত ও তাসবিহ্-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহ পাকের দরবার পাকে করুণ ভাবে ফরিয়াদ করে দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে। যাহার যত টুকু শারীরিক ক্ষমতা আছে।
পবিত্র শবে বরাতে এভাবে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। তাই আসুন এই পবিত্র রাতে আমরা বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করি।
লেখকঃ-
মওলানা মো. রুকুনউদ্দিন কাদরী
সিনিয়র শিক্ষক
মাদ্রাসাতু সাবি-ইল- হাসান
দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী।