মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিস: দালাল-কর্মচারীদের খপ্পরে নাজেহাল পাসপোর্ট গ্রহীতারা

জহুরুল ইসলাম হালিম / ৬৩১ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

0Shares

সাইফুল ইসলাম মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের খাবাশপুর গ্রামের ঝর্ণা রাণী সরকার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে জরুরী ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে পাসপোর্ট অফিসের দালাল রনির মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে আবেদন করেন। আবেদনের সময় দালালকে দিতে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরপর বারবার পাসপোর্ট পেতে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক অফিস ও ঢাকা অফিসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তার স্বামী বাদল চন্দ্র সরকার। এভাবে প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পাসপোর্ট হাতে পাননি ঝর্ণা রাণী সরকার।
অপরদিকে সিংগাইরের চান্দহর ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামের সজীব হোসেন সৌদি আরবে বাংলাদেশ এ্যাম্বাসী থেকে তার পাসপোর্ট নবায়ন করেন। বাংলাদেশে এসে ফিঙ্গার দিতে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা…. তাকে বলেন মানিকগঞ্জে এই পাসপোর্ট একটিভ করা সম্ভব না। এই পাসপোর্টের ফিঙ্গারের জন্য ঢাকায় যেতে হবে। নানা হয়রানির পরে সজিব আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা অফিসে ফিঙ্গারের জন্য আবেদন করেন। এরকম অসংখ্য পাসপোর্ট গ্রহীতা দালালদের খপ্পরে পড়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পেতে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয় পাসপোর্ট গ্রহীতাদের। আবার দালাল ধরেও সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেনা অনেকেই। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পাসপোর্ট গ্রহীতারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালাল ধরে চাহিদা মত টাকা দিলেই সময়মতো পাসপোর্ট পাওয়া যায়। আর দালাল ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।
আরো জানা গেছে, মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসের সুপারিয়েন্টেড মোঃ মনিরুজ্জামান পাসপোর্ট গ্রহীতাদের আবেদন যাচাই বাছাইয়ের জন্য কাউন্টারে বসেন। আর সেখান থেকেই পাসপোর্ট গ্রহীতাদের আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সময় আবেদনকারীকে নানা রকম হয়রানি করে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন। নানা অজুহাতে আবেদনকারীদের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাহিরে থেকে দালালের ফোনে ফেরত দেওয়া আবেদন জমা নেওয়া হয়। একইভাবে উচ্চমান সহকারী টুকটুকি, জামান দালালদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে পাসপোর্ট তৈরিতে নানা রকমের অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে আদায়কৃত ওইসব অর্থ সপ্তাহান্তে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তা জুড়ে দালালদের সাড়িবদ্ধ লাইন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এই দালাল চক্র অফিসের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বিভিন্ন রকমের পাসপোর্টের জন্য ভীড় জমাচ্ছে। এসব দালাল চক্রের কেউ কেউ পাসপোর্ট অফিসের সামনে দোকান বসিয়ে আবার কেউ কেউ বাড়িতে বসেই মোবাইল ফোনে পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরির কাজ করছে।
ভুক্তভোগী ঝর্ণা রাণী সরকারের স্বামী বাদল চন্দ্র সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা পাসপোর্টের জন্য মানিকগঞ্জ ও ঢাকায় ঘুরতে ঘুরতে আমার এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমার স্ত্রী প্রায় মারা যাওয়ার অবস্থা। এত ঘোরাঘুরির পরও এখনো পাসপোর্ট পাইলাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অফিসের এক দালাল জানান, পাসপোর্ট অফিসের ছোট বড় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নানা রকম অনিয়ম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে দ্বায়িত্বরত আনসাররাও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।
মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসের সুপারিয়েন্টেড মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আমার অফিসের বাইরে কে কি করে সেটা তো আমার জানার কথা না। কোন ব্যক্তি বা দালালের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই। আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেইনা।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেন, অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে কোন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook Comments


এ জাতীয় আরো খবর
NayaTest.jpg