সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের আরিচা নদী বন্দরের আওতাধীন ফোরশোর ভূমিতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার পুরাতন টার্মিনালের সীমানার মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বালি ও মাটির ব্যবসা। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দায়সাড়া অভিযোগ করেই দ্বায়িত্ব অবহেলায় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতারা আরিচা নদী বন্দরের পাটুরিয়ার ফোরশোর এরিয়া ও পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ বিআইডব্লিউটিএ’র জায়গা দখল করে অবৈধভাবে মাটি ও বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র এর দাখিলকৃত এক অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকার ১৯৫৮ সালের অর্ডিন্যান্স মোতাবেক ১৯৮৩ সালে এক গেজেটের মাধ্যমে অন্যান্য নদী বন্দরের ন্যায় আরিচা নদী বন্দর ঘোষণা করে এবং বিআইডব্লিউএ-কে বন্দর সংরক্ষক নিযুক্ত করেন। সেমতে বিআইডব্লিউটিএ The port act- 1908 এবং The port rules- 1966 অনুযায়ী বন্দর সীমানাভূক্ত এলাকার যাবতীয় কার্যক্রম বিআইডব্লিউটিএ’র এখতিয়ার ভূক্ত। কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিত বন্দর সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বালি মাটি উত্তোলন স্তপিকরণ অথবা স্থাপনা নির্মাণ কিংবা অন্য কোন কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার নেই।
তবে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি আরিচা নদী বন্দরের আওতাধীন ফোরশোর ভূমিতে আরিচা পুরাতন ফেরি টার্মিনালের অভ্যন্তরে পাটুরিয়ার ফোরশোর এরিয়ায় ফেরিঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু মাটি স্তপিকরণ করে ব্যবসা করে আসছে।
এরই প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরশোর সীমানার মধ্যে অবৈধভাবে যাতে কেউ বালু মাটির ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। আইডব্লিউটিএ’র আরিচা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে বার বার অভিযোগ করলেও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরিচা নদী বন্দর এলাকায় অফিস ঘর নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে ধূলাবালিতে অতিষ্ট জনপদ অপরদিকে বেদখলের হুমকিতে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র ফোরশোর ভূমি।
বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খান, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান জানু, শিবালয় ইউপি চেয়ারম্যান আলালউদ্দিন আলাল, আরোয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম, শ্রমিক লীগ নেতা মিলন কাজী, রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার নবনির্বচিত মেয়র নজরুল ইসলাম মণ্ডল সহ মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বালু ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে।
শ্রমীক লীগ নেতা মিলন কাজী বলেন, আমরা ব্যক্তি মালিকানা জমি ভাড়া নিয়ে সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। আর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রহিম খান ২ কোটি টাকা দিয়ে ঘাট এলাকা ইজারা নিয়েছে। ফেরি চলাচলে বিঘ্ন না করে আমরা তার মারফতেই আমরা ব্যবসা করি।
এ বিষয়ে শিবালয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও শিবালয় উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান জানু নিজের দায় এড়িয়ে বলেন, আমি এসব বালু ব্যবসার সাথে জড়িত না। তবে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা বালু ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেন।
শিবালয় থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ কবির বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসার কথা জানতে পেরে বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা নদী বন্দর অফিসে যাই। খোজ নিয়ে জানতে পারি আরিচা এলাকায় ১জন এবং পাটুরিয়া এলাকায় ২জন রয়্যালিটি জমা দিয়ে বালু ব্যবসা করছে। তবে কারা অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে জানায়নি। তবে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে বিআইডব্লিউটিএ সহযোগিতা চাইলে সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা নদী বন্দরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এখনো পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাওয়া হয়নি। যদি আরিচা নদী বন্দরের ফোরশোর এলাকায় কেউ অবৈধ বালু ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম রুহুল আমিন রিমন বলেন, খাল ও নদী সংরক্ষণ কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নদী রক্ষা কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছি।