জহুরুল ইসলাম হালিম// রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নামমাত্র জলাশয়ের লিজ নিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় বিশাল জলাশয়কে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীর একটি চক্র। অভিযোগ পাওয়া গেছে জলাশয়ে নিজেদের জমিতে মাছ ধরতে গিয়ে প্রভাবশালী চক্রের সশস্ত্র বাহিনীদের হাতে এলাকার দরিদ্র জেলে ও জমির মালিকরা নির্যাতিত হয়েছেন।
মরাপদ্মা নদীর ওই বদ্ধজলাশয়টি উন্মুক্ত রাখার দাবীতে এলাকাবাসী বহুদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসন যে জায়গা লিজ দিয়েছে সেটাও চিহ্নিত করে দেয়নি। এর সুযোগ নিচ্ছে নামমাত্র লিজ নেওয়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
জলাশয়টির নাম উজানচর ইউনিয়নের উজানচর বদ্ধজলশয় হলেও এর তফসিলভূক্ত জমি দেখানো হয়েছে উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যেখানে রয়েছে কয়েক হাজার একর জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বদ্ধজলাশয়টি দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ৩ বছরের জন্য লিজ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কথিত মাছ চাষের নামে কোলে ব্যাপক রাজত্ব কায়েম করেছে। আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত তাদের লিজের মেয়াদ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদের লোকজন জলাশয়ের দৌলতদিয়ার প্রায় ৫ কি:মি: অংশে জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধ করে দিয়েছে। উজানচরের প্রায় ১০ কি:মি: অংশে মাছ ধরার অনুমতি দিলেও বিক্রিত মাছের ৪০ শতাংশ টাকা নিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এর কোন রকম ব্যত্যয় ঘটলে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটছে। আবার তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানোর ঘটনাও রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা চলছে।
দৌলতদিয়া হোসেন মন্ডল পাড়া ও সৈদাল পাড়ার জেলে সাহেদ শেখ , আমির সিকদার, লোকমান সরদার, নান্নু মৃধা, আলামিন শেখসহ অনেকেই বলেন, আমরা জলাশয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরতে গেলে কয়েকদিন আগে প্রভাবশালী চক্রের মাস্তানরা আমাদেরকে মারধর করে জাল কেড়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে আমাদের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মূখে প্রাণে মারার ভয় দেখায় এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। প্রভাবশালী চক্রের ভাড়াটে মাস্তানরা অস্ত্র নিয়ে নদীতে টহল দেয়। গত শনিবার তারা ট্রলার নিয়ে টহল দিতে আসলে এলাকার কয়েকশ লোক ধাওয়া দিয়ে ট্রলারটি আটক করে।
দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পপাদক মোঃ নজরুল ইসলাম দাবী করেন, তিনি বৈধভাবে লিজ নেয়া জলাশয়ের ভোগ দখলে রয়েছেন। তার কোন মাস্তান বা প্রভাবশালী কেউ নেই। জলাশয়ের পাহারাদারদের সাথে এলাকার মানুষের মধ্যে একটু সমস্যা হলেও থানা পুলিশের সহযোগীতায় সেটা সমাধান করা হয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল জানান, দরিদ্র জেলেদের স্বার্থে জলাশয়ে ‘জাল যার, জলা তার’ নীতি বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। তাছাড়া সরকারিভাবে কতোটুকু এলাকা লিজ দেয়া হয়েছে এটারও নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত থাকা দরকার। অন্যথায় সমস্যা থেকেই যাবে। বড় ধরণের হানাহানিরও আশংকা রয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ আল তায়াবীর জানান, জলাশয় নিয়ে কিছুদিন আগে উত্তেজনা দেখা দিলে আমি উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। তবে জনস্বার্থ বিরোধী যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। অনেক কিছুই তার জানা নেই। তবে ফাইলপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। এ ক্ষেত্রে জলাশয়ের মধ্যে থাকা ভূমি মালিকদের তিনি প্রশাসন বরাবর গণপিটিশন দাখিল করতে পরামর্শ দেন।