আজ ২৩শে জুলাই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের ৯৫ তম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি প্রথম সরকার গঠনেও নেতৃত্ব দেন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের এই রাজনীতিক। বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু আর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী তাজউদ্দিনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে দুর্দান্ত এক রাজনৈতিক জুটি। যার হাত ধরে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ। নানান ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যে মানুষটি পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের কান্ডারী, এক নিঃসঙ্গ সারথী।
ছোট্টবেলাতেই এই মানুষটি দেশপ্রেম আর রাজনীতির দর্শন পেয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজবন্দীদের কাছ থেকে। মানবতাবাদী এই মানুষটি স্কুলের ছুটিতে বাড়িতে ফিরেও লেগে যেতেন কলেরা রোগীদের সেবা শুশ্রষা করার কাজে। উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্নপূরণের জন্য লেখাপড়া করার ইচ্ছা তাঁর মধ্যে ছিলনা, তাঁর স্বপ্ন ছিল রাজনীতি করার, যে রাজনীতি হবে মানুষের জন্য। তবু অসাধারণ মেধার সাহায্যে তিনি কৃতিত্বের সাথে পেরিয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপ। রাজনীতিতে সক্রিয় হবার কারণে শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতায় ছেদও পড়েছিল বারবার। ধীরে ধীরে এই প্রচারবিমুখ মানুষটি নিজগুনে হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের এক অপরিহার্য কর্মী, শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর।
এরপর ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাধীন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে প্রবেশ করেছিলেন ভারতে এবং ইন্দির গান্ধির সাথে দেখা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সর্বপ্রকার সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিলেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন বিষয়ে পি. এন. হাকসার, ডি. পি. ধর এর মত তৎকালীন বাঘা বাঘা ভারতীয় ব্যুরোক্র্যাটদের সাথে আলোচনায় বসে তাঁর মেধাবী বিশ্লেষণী ক্ষমতার বলে তাদের সমীহের পাত্র হয়েছিলেন। নয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রমে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক নানান চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য জয় করে এনেছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। অতঃপর তাঁর মুজিব ভাইয়ের হাতে স্বাধীন দেশের ক্ষমতাভার তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
স্বাধীন দেশে তাজউদ্দীন আহমদ সফলভাবে একজন অর্থমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বিভিন্ন আদর্শগত মতানৈক্যে বিদায় নেন মন্ত্রীসভা থেকে। তাঁর দুঃখ ছিল একটাই, মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সেই নয় মাসের গল্প তাঁর মুজিব ভাইকে বলতে না পারার দুঃখ। ১৫ই আগষ্ট ঘাতকদের হাতে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর তাজউদ্দীন আহমদ আক্ষেপ করে বলেছিলেন ‘মুজিব ভাই জেনে গেলেন না কে তাঁর বন্ধু ছিল আর কে তাঁর শত্রু’।
এরপর বিশেষ আইনে গ্রেফতার হয়ে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম. মনসুর আলী এবং এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানের সাথে ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন তাজউদ্দীন আহমদ।