জহুরুল ইসলাম হালিম // আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১২ টার সময় রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী লিমা আক্তার মেঘলার (১৯) হত্যার বিচারের দাবিতে স্বামী রিমন সহ সকল হত্যাকরীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তার পরিবার। লিমার পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে স্বামী রিমনসহ তার পরিবার। আরও অভিযোগ করেন যে আমরা অশিক্ষিত ও দারিদ্র হওয়ায় সাদা কাগজে তার স্বাক্ষর জাল করে চিকিৎসক ভুল রিপোর্ট দেয়। প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কাছে আবেদন করেন তার মেয়ের লাশ আবার উঠিয়ে পূনঃ ময়নাতদন্ত করে সঠিক রিপোর্ট দিয়ে আসামীদেরকে বিচারের আওতায় এনে সঠিক বিচার দাবি জানান।
উল্লেখ থাকে যে সদর থানার দাদশী ইউনিয়নের সমেশপুর গ্রামের মো. নবা শেখের ছেলে অটোরিক্সা চালক রিমন
শেখ (২৫)। দেড় বছর আগে ওই লিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে গত ১০ জানুয়ারি পরিবারিক ভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লিমার দরিদ্র বাবা স্থানীয় বিভিন্ন
এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের জন্য স্বর্ণালংকার ও মেয়েজামাইকে নগদ এক লাখ টাকা দেন। বিয়ের পর শশুর বাড়িতে গিয়ে স্বামীর সংসারে সুখে দিন কাটছিল লিমার। এরই মাঝে রিমন শেখের আচরণ বদলে যায়। শশুর বাড়ি থেকে আরো এক লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে নিজ
স্ত্রী লিমা খাতুনের উপর সে শারীরিক ও মানষিক নির্যাত চালাতে শুরু করে। এতে লিমার জীবনে নেমে আসে অমানিশা। এদিকে বিষয়টি জেনে লিমার অসহায় বাবা-মা তাদের
মেয়েজামাইয়ের টাকার দাবী মেটাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। মেয়ের সুখের জন্য গত কোরবানীর ঈদের কয়েক দিন আগে ধারদেনা করে মেয়েজামাই রিমনকে আরো ৪০ হাজার টাকা দেন লিমার বাবা কেরামত আলী। এতে যৌতুকের টাকার ক্ষুধা আরো বেড়ে যায় রিমনের। এক লাখ টাকা চেয়ে ৬০ হাজার টাকা কম পেয়ে সে তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালানোর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গৃহবধূ লিমা আক্তার ফোনে আর্তচিৎকার করে তাঁর বাবাকে বলেন, ‘তুমি আমাকে বাঁচাও আব্বু। টাকা না দিলে তোমার জামাই আমাকে মেরে লাশ বানাবে।’ অসহায় কেরামত আলী আর কোন টাকা দিতে অপারগতা
প্রকাশ করেন। এ কথা জেনে ওই রাতেই লিমা আক্তারকে বেদম মারপিট করে রিমন। এ সময় স্বামীর মারপিটে স্ত্রী লিমা গুরুতর আহত হন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে মারাত্মক আহত অবস্থায় গৃহবধূ লিমাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামীসহ তাঁর শশুর বাড়ির লোকজন। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিমা খাতুনকে মৃত ঘোষণা করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে স্বামী রিমন ও তার পরিবার সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে গৃহবধূ লিমা আক্তারের লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লিমা আক্তারের লাশটি রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দের মজিদ শেখেরপাড়া গ্রামে তাঁর বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জানাজা শেষে ওই রাতেই স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।