ছাতক পৌরসভা নির্বাচনের তপশীল এখনো ঘোষনা করা হয়নি। তবে প্রার্থীরা রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত। নির্বাচন কমিশনের ঘোষনা অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারীর মধ্যে ১ম দফা পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই এখানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছাতক পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী আসন্ন পৌর নির্বাচনে আবারো মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন। ছাতক পৌরসভায় টানা ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো ছাতা প্রতীক নিয়ে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্বে ছিলেন ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। ২০১১ সালের নির্বাচনে আবুল কালাম চৌধুরী কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। পরবর্তী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। এ পৌরসভায় একবার পৌর চেয়ারম্যান, দু’বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম চৌধুরী। বর্তমানেও পৌর মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন। ছাতক পৌরসভার টানা তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী শহরের বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। তার পিতা মরহুম আরজ মিয়া চৌধুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সালিশ ব্যক্তিত্ব। চাচা সুজন মিয়া চৌধুরী পৌরসভা গঠনের আগে বৃহত্তর ছাতক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ছাতক উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানও ছিলেন সুজন মিয়া চৌধুরী। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবেও পরিচিত তিনি। পৌরসভার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি আবুল কালাম চৌধুরীর সাথে আমাদের প্রতিনিধির কথা হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ে। এসময় পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বলেছেন, ছাতক পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করতে তার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। পৌরসভায় ড্রেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, ব্রিজ কালভার্ট সহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। এ গ্রেডের এ পৌরসভায় নির্মিত হয়েছে আধুনিক পৌর ভবন। চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো বাস্তবায়িত হলে এর সুফল ভোগ করতে পারবেন শহরবাসী। জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেছেন, শহরে ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মাদার ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বানিজ্যিক এ শহরে আবাসিক ও ব্যবসা-বানিজ্যে নান্দনিকতার ছোঁয়া লাগবে। ময়লা রাখার জন্য ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে শহরের অদুরে ৩ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ভাগাড়ের জমি উপযোগি করতে ৩ কোটি টাকা ব্যায়ের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে পৌরসভার অভ্যন্তরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজের টেন্ডার হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিনি সকল পৌর নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বানিজ্য ও নদী কেন্দ্রিক এ পৌরসভাকে সাজাতে একমাত্র সুষ্ট ও সুন্দর পরিকল্পনাই পারবে শেখড় থেকে শিখরে নিয়ে যেতে। দল তাকে সুযোগ দিলে আরেকবার সে সুযোগ কাজে লাগাবেন তিনি।
আমাদের প্রতিনিধির এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাতকে আওয়ামীলীগে কোন গ্রুপিং নেই। আসন্ন পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পুনরায় নির্বাচন করতে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। দল তাঁকে মনোনয়ন না দিলে দলের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন ছাতক পৌরসভার মেয়র ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী।
এক প্রশ্নের জবাবে, আসন্ন পৌর নির্বাচনে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান। ১৯৯৭ সালে ছাতক পৌরসভা গঠিত হয়েছে। পৌরসভা গঠনের পর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল খালেক ১৯৯৯ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু মিয়া। তিনি ২০০৪ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী তিনটি নির্বাচনেই টানা বিজয়ী হয়েছেন আবুল কালাম চৌধুরী। ছাতক পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন পৌর নির্বাচন হবে এ পৌরসভার ৫ম নির্বাচন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে এ পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ছিলো প্রায় ৩১ হাজার। আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৩৪ হাজারে পৌছাতে পারে বলে জানা গেছে।
ছাতক(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি