শরতের আগমন ও বাতাসে শুভ্র কাশফুলের দোল খাওয়া সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। সামনেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
প্রতিবছরই রাজবাড়ীতে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রভাব থাকার কারণে সে উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়বে বলেই মনে করছে প্রতিমা তৈরীর কারিগররা। যে কারণে এ বছর প্রতিমা তৈরীর কাজও শুরু হয়েছে কিছুটা দেরিতে।
একই সাথে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত খড়, বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমা তৈরীতে খরচ বেশি পড়ছে।
বৃহষ্পতিবার সকালে রাজবাড়ী সদরে ধুঞ্চি শক্তি সংঘ মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরীর কারিগররা খর, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে প্রতিমার গঠন তৈরীর পর তাতে মাটির প্রলেপ শেষ করেছে। প্রতিমায় দেয়া হবে রংতুলির আঁচর, এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরে রং এর কাজও চলছে।
কালুখালী থেকে ধুঞ্চি শক্তি সংঘ মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করতে আসা বিমল পাল জানান, খড়, বাঁশ ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছর তুলনায় এবছর প্রতিমা তৈরীতে খরচ পড়ছে কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু প্রতিটা মন্দিরে গত বছরের তুলনায় প্রতিমা তৈরিতে এবার দাম অনেক কম পেয়েছি। আমরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। প্রতি বছর দুর্গা পূজার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি। তবে এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি অনেকটা আলাদা। শেষের দিকে কিছু প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি।
কার্তিক পাল জানান, প্রতিবছর চার-পাঁচ মাস আগের থেকে রাজবাড়ী জেলা সহ বাইরের জেলাতেও প্রতিমা তৈরি করতাম। ১০-১২ টি প্রতিমা তৈরি করতাম। এবার মাত্র ৫ টি প্রতিমা তৈরি করছি নিজ জেলাতেই।
ধুঞ্চি শক্তি সংঘ মন্দিরের সভাপতি গোপাল রায় ও সাধারণ সম্পাদক অশান্ত পাল (বাঘা) রাজবাড়ী টেলিগ্রাফকে জানান, আমরা সরকারের দেওয়া ২৬টি বিধিমালা জানতে পেরেছি । স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজা মন্ডপে পূজা হবে। গত বছরের তুলনায় এবার আয়োজন খুবই সামান্য হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি শ্রী প্রদিপ্ত চক্রবর্তী কান্ত বলেন, আসন্ন দুর্গা পূজায় বৈশিক মহামারী করোনা ভাইরাস চলমান সময়ে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফা নিয়ম নীতি অনুসরন করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত ভাবে পূজা উদযাপন করাতে বলা হয়। পূজাতে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো যাবেনা। সবাইকে মাস্ক পরে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রবেশ করতে হবে। মন্দির কমিটির নিজ উদ্যোগে জীবানুনাশক স্প্রে রাখতে হবে৷ কোন গেট করা যাবে না, আলোকসজ্জা করা যাবে না শুধু মাত্র সাদা লাইট ব্যবহার করতে হবে। নারী-পুরুষ আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতীমা বিসর্জন স্থানে পযাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
জেলা প্রশাসন, রাজবাড়ী ও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে:
★মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবেশ ও বাহির পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক ও নির্দিষ্টথাকতে হবে।
★পূজা মন্ডপে আগত ব্যক্তিবর্গ নির্দিষ্ট দূরত্ব (৩ ফুট/ কমপক্ষে ২ হাত) বজায় রেখে লাইন করে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করবেন এবং প্রণাম শেষে বের হয়ে যাবেন। সম্ভব হলে পুরাে পথ পরিক্রমাটি গােল চিহ্ন দিয়ে নির্দিষ্ট করতে হবে।
★পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং ভক্তের সংখ্যা অধিক হলে একাধিকবার পুস্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করতে হবে।
★পূজা মন্ডপে আগত সকলের মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক। মাস্ক পরিধান ব্যতীত কাউকে পূজা মন্ডপে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
★মন্দিরের প্রবেশ পথে হ্যান্ডস্যানিটাইজার, সাবান পানি দিয়ে হাত ধােয়া এবং তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
★সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ পূজা মন্ডপে প্রবেশ করবেন না।
★ হাঁচি বা কাশির সময় টিস্যু, রুমাল বা কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু ও বর্জ্য ফেলার জন্য পর্যপ্ত ঢাকনাযুক্ত বিনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং জরুরীভাবে তা অপসারনের ব্যবস্থা করতে হবে।
★ প্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযােগিতা/ ধুনচী নাচ এবং শােভাযাত্রা থেকে বিরত থাকতে হবে।
★ধর্মীয় উপাচার ব্যতীত অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলােকসজ্জা বর্জন
করতে হবে।
★পূজা মন্ডপে একজন থেকে আরেকজন নির্দিষ্ট দূরত্ব (৩ ফুট/ কমপক্ষে ২ হাত)
বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রয়ােজনে বসার স্থানটি নির্দিষ্ট করে
দিতে হবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিফলিত হয়ে।
★স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সকল নির্দেশনা যথাযতভাবে পালন করতে হবে।