দিনাজপুর জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার রুদ্রপুরে অবস্থিত দীপশিখা স্কুল (Dipshikha School) মাটির তৈরি একটি ভিন্নধর্মী বিদ্যানিকেতন। স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এই বিদ্যালয়ে। রুদ্রপুর গ্রামের শিশুদের প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা বাদ দিয়ে কৃষি বা অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়ত। ২০০২ সালে রুদ্রপুর গ্রামে গবেষণার কাজে অস্ট্রেলিয়ার লিজ ইউনিভার্সিটি থেকে Anna Herigar সহ আরো ১০ জন শিক্ষার্থী আসেন। গবেষণা শেষে অন্যরা ফিরে গেলেও Anna Herigar তাঁর গবেষণা ও স্থাপত্যবিদ্যা কাজে লাগিয়ে রুদ্রপুরের অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের লক্ষ্যে একটি স্কুল বানানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে জার্মানির উন্নয়ন সংস্থার আধুনিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশের বেসরকারি সেবা সংস্থা দীপশিখা। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৬ সালে METI Handmade School নির্মাণ করা হয়।
দিনাজপুরে মাটির তৈরি ভিন্নধর্মী দ্বীপশিখা স্কুল
স্থানীয় কাচামাল, বাঁশ ও কাদামাটি দিয়ে নির্মিত দীপশিখা মেটি স্কুল (Dipshikha Meti School) হিসেবে অধিক পরিচিত। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ৮,০০০ বর্গফুটের দোতালা স্কুলের প্রতি তালায় তিনটি করে কক্ষ এবং দোতালায় যাওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে নির্মিত উন্মুক্ত সিঁড়ি রয়েছে। নিচের অংশের মোটা মাটির দেয়ালের প্লাস্টার হিসেবে মাটি, বালু ও খড় মেশানো কাঁদা দেওয়া হয়েছে। উপরের তালায় বাঁশের পাটাতনের উপর চাটাই ও মাটি দিয়ে এবং দোতালার বাঁশের সাথে কাঠ দিয়ে ছাদ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার জন্য উপরে টিন দেওয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব হিসেবে মেঝেতে ওয়াটার প্রুফ পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে। দীপশিখা স্কুলের ভিতরে প্রাকৃতিক উপায়ে শীতের দিনে গরম ও গরমের দিনে ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া নিচ তালায় বাচ্চাদের খেলাধূলার জন্য গুহার মতো কিছু খোলা ঘর রয়েছে। বর্তমানে স্কুলে শিশু শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের পাশাপাশি নাচ, গান , অভিনয়, চিত্রাঙ্কন ও ইংরেজি ভাষা শিখানো হয়। আগা খান ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে সেরা স্থাপত্যের জন্য মেটি স্কুলটিকে নির্বাচিত করেন এবং দীপশিখা স্কুলের ১৮ জন নির্মাণ শ্রমিককে পুরস্কৃত করা হয়।