ফরিদপুরের কামারখালীতে এক বিধবা মহিলার জমিতে লাগানো মেহগনি বাগানের চারা গাছ কেটে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই বিধবা মহিলা স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে নালিশ দিলেও কোন সমাধান করে দেয়নি তারা। উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে থানা পুলিশের স্মরনাপন্ন হয়েছেন ওই বিধবা মহিলা। প্রভাবশালীদের হুমকি ধামকিতে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ওই বিধবা মহিলা ও তার একমাত্র কন্যা।
জানা যায়, মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত দুলাল বিশ্বাসের স্ত্রী রত্না পারভীন। রত্না পরভীনের স্বামী দুলাল বিশ্বাস ২৩ বছর আগে মারা যান। এক কন্যা সন্তান নিয়ে কোন রকমে জীবনযাপন করছেন তিনি। গত শনিবার (২৯ আগস্ট) বাড়ীর পাশে সালামাতপুর ঘাট সংলগ্ন স্বামীর রেখে যাওয়া ৫২ শতাংশ জমিতে মেহগনি গাছের চারা রোপন করেন রত্না বেগম। ওই দিন রাতেই স্থানীয় প্রভাবশালী আলী মিয়া ও মুকুল মিয়া ওই জমির অধিকাংশ মেহগনির চারা কেটে ও উপড়ে ফেলেন। পরদিন রত্না বেগম স্থানীয় মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেন। এরপর কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও তারা কোনো সমাধান করে না দেওয়ায় ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) রত্না বেগম এবিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বিধবা রত্না বেগম জানান, আমার স্বামী মারা গেছেন ২৩ বছর আগে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বর্তমানে আমার মেয়ে রাজেন্দ্র কলেজে অনার্সে পড়ার কারনে ফরিদপুরে থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসি। গত শনিবার (২৯ আগস্ট) বাড়িতে এসে স্বামীর রেখে যাওয়া ৫২ শতাংশ জমিতে শ্রমিক দিয়ে মেহগনি গাছ রোপন করি। রাতেই স্তানীয় প্রভাবশালী আলী মিয়া ও মুকুল মিয়া ওই জমির অধিকাংশ মেহগনির চারা গাছ কেটে ও উপরে ফেলেন। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আলী ও মুকুল স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনা। আমার স্বামী ও পুত্র সন্তান না থাকায় আমার সম্পত্তি দখলের পায়তারা করে আসছে তারা। বিষয়টি গ্রামের সকলেই জানে। রত্না বেগম আরো বলেন, শুধুমাত্র গাছ কেটেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। আমার বাড়ির জমি পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে তারা। ওই জমি এক ডাকাতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা বাড়ি তৈরি করে আমাকে সব সময় ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি আমি বাড়িতে আসলে গ্রামের বাড়ি না থেকে কামারখালী এক আত্মীয়র বাড়িতে থাকি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি কোন সময় তারা আমাকে মেরে ফেলে। এবিষয়ে মধুখালী থানায় অভিযোগ দিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, রত্না বেগমের স্বামী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। একজন অসহায় নারীর গাছ কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। আলী ও মুকুল প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায়না। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু রত্না বেগমের জমি দখলই নয়, আলী ও মুকুল এর আগেও এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমিও দখল করে নিয়েছে। তাদের অত্যাচারে সংখ্যালঘু পরিবারটি ওই এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও তাদের দুজনের বিরুদ্ধে এলাকায় আরো নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বাবু বলেন, ওই বিধবা নারী স্থানীয় মেম্বারকে সাথে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি বলার পর আমি আলী ও মুকুলকে বলে দিয়েছিলাম। তারা পুনরায় গাছ লাগিয়ে দিবে বলেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তারা গাছ লাগাতে অস্বীকার করে। বিধবা নারীর গাছ কেটে ফেলে তারা ঠিক করেনি। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মধুখালী থানার এস আই আশরাফুল আলম বলেন, বিধবা নারীর গাছ কাটার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ে গত ০৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মুকুল মিয়া ও আলী মিয়ার সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগোযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া সম্ভব হয়নি।