ঢাকা বিভাগের মধ্যে শান্তশিষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জেলা। দেশের দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলার প্রবেশদ্বার ও পদ্মা-যমুনার মিলনস্থল গোয়ালন্দ এ জেলাকে করেছে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট মন্ডিত।বিষাদসিন্ধু খ্যাত সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন থেকে শুরু করে কাজী মোতাহার হোসেন রাজবাড়ী জেলা অনেক গুনীজনের জন্মস্থান। ঘুরে দেখার জন্য রাজবাড়ী জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। রাজবাড়ী জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র গুলো হচ্ছে সদরের গোদার বাজার পদ্মার পাড়,বাণিবহের বাড়িগ্রাম,কালুখালীর ঠাকুরবিল,
পাংশার বাহাদুরপুরের আবু হেনা পার্ক, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতি কেন্দ্র ইত্যাদি। দেশের মধ্যঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে খুব সহজেই ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে রাজবাড়ীতে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে রাজবাড়ীর দূরুত্ব মাত্র ১১৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ফেরিযোগে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট পৌছানো মাত্রই রাজবাড়ী জেলার সৌন্দর্য কিছুটা অনুধাবন করতে পারা যায়। বলে রাখা ভালো গোয়ালন্দ রাজবাড়ী জেলার অধীনে একটি উপজেলা। একসময় রাজবাড়ী জেলা ছিলো ফরিদপুরের অধীনে গোয়ালন্দ মহাকুমার অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীকালে গোয়ালন্দ মহুকুমা বিলুপ্তি করে ১৯৮৪ সালে ১ মার্চ রাজবাড়ী জেলা প্রতিষ্ঠা করা হয়।তাই অনেক সময় রাজবাড়ীর পরিচয়ে গোয়ালন্দের নাম উঠে আসে।
বিনোদনকেন্দ্র গুলোর মধ্যে গোদার বাজার পদ্মার পাড়ের অবস্থান সদরে হওয়ায় এইখানে যাওয়া সবচেয়ে সহজ। বাসে করে আসলে প্রথমে নামতে হবে বড়পুল।আর ট্রেনের ক্ষেত্রে নামতে হবে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে। বড়পুল অথবা রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন যেখানেই নামা হোক না কেনো ইজিবাইক অথবা রিকশায় চড়ে খুব সহজেই কয়েক মিনিটের মদ্ধেই চলে আসা যায় গোদার বাজার পদ্মার পাড়ে।
গোদার বাজার আসা মাত্রই এর বিশালতা অনুভব করতে পারা যায়।আসলে পদ্মা নদীর তুলনা আর কোনোকিছুর সাথে করা সম্ভব না তবে এলাকার লোকজন গোদার বাজারকে মজা করে বলে মিনি কক্সবাজার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোধূলীর সময় গোদার বাজার সাজে এক আলাদা সাজে। প্রতিদিনই এর রূপের বৈচিত্র দেখা যায়,নদীর পাড়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্ত।বর্ষা মৌসুমে নদী থাকে পানিতে পরিপূর্ণ ।ভরা পদ্মায় পরিবার অথবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে নৌকাভ্রমণ হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত গুলোর মধ্যে একটি।
লেখক: মোঃ ইসতিয়াক হোসেন (সোয়েব)
গোদার বাজার আসার পথমধ্যেই ঘুরে দেখা যেতে পারে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক লাল ভবন।১৮৭৮ সালে বাণিবহের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও তার ভাই অভয় শংকর মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন লাল ভবন। ইতোমধ্যেই প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর এই স্থাপনাকে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া খেয়ে দেখা যেতে পারে রাজবাড়ীর বিখ্যাত মিষ্টি এবং পদ্মার ইলিশ। সারাদেশে রাজবাড়ীর মিষ্টির এক বিশেষ সুনাম রয়েছে।
তবে এতকিছুর পরেও রাজবাড়ী নদী ভাঙন কবলিত একটি জেলা। গতবছর নদী ভাঙনে গোদার বাজারের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা অনেক স্থাপনা পানিতে মিলিয়ে যায়।শহররক্ষা বাধের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্ষা মৌসুমে স্থানীয়রা ভাঙণ আতংকে দিন কাটান। এছাড়া নদীর পাড়ে পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্যবান আধুনিক কোন ওয়াশরুমের ব্যাবস্থা নেই।রাতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নদীর পাড়ে নেই পর্যাপ্ত আলোরা ব্যাবস্থা।ফলস্বরূপ নিরাপত্তার কারণে অনেকেই সন্ধ্যার পর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না।যেকোন ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য রাজবাড়ী জেলা হতে পারে ভ্রমণের আদর্শ জায়গা।প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এসব পর্যটনকেন্দ্রকে জাতীয় মানে উন্নতিকরণের ব্যাবস্থা করতে হবে।
লেখক: মোঃ ইসতিয়াক হোসেন (সোয়েব)
শিক্ষার্থী – আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।