গায়ে হলুদের দিন বাইক চালিয়ে শোভাযাত্রা করলেন কনে
এই সুপারসনিক উত্তরাধুনিক কালে বাংলাদেশে যখন বেগম রোকেয়া পূর্ববর্তী মধ্যযুগ ফিরিয়ে আনবার জোর প্রচেষ্টা চলছে। ইউটিউব/ফেসবুকের বাণিজ্যিক মোটিভেটররা মরিয়া হয়ে ওঠেছে। নারীদের ঘরে বন্দি থাকতে বলা হচ্ছে। কালো অবগুণ্ঠনে ঢাকতে বলা হচ্ছে মায়েদের পবিত্র মুখ। ক্লাস ফোরের বেশি পড়াশোনা করতে পারবে না নারীরা। বলা হচ্ছে, নারীর জন্মই হয়েছে বাচ্চা উৎপাদন ও পতিসেবা করবার জন্য। নারী কোনো লিডারশিপ করতে পারবে না। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাদের নাই।এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার বাস্তবতায় নারী যখন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সদিচ্ছার সুন্দর অভিলাষ নিয়ে ঘরের বাইরে আসে তা দেখবার আনন্দ অন্যরকম।
বিয়ের কনে নিজের গায়ে হলুদের দিন পুরো শহরজুড়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে শোভাযাত্রা করেছে। জানি চিরায়ত পুরুষতন্ত্র ও সেকেলে মোল্লাতন্ত্রের কাছে ব্যাপারটায় বিরাট খটকা লাগছে। নারীর এভাবে ঘরের বাইরে আসায় হয়ত তাদের অনুভূতি টিকটিকি লেজের মতো খসেও পড়েছে। অথচ মেয়েটি কিন্তু খুনখারাবি করেনি, ধর্ষণ করেনি, ঘুষ খায়নি, দুর্নীতি বা লুটপাট করেনি। দেশের সম্পদ কুক্ষিগত করেনি। মানুষের ন্যূনতম অনিষ্টও করেনি।
স্রেফ তার মতো করে আনন্দ উদযাপন করেছে। বিয়েটা অতি অবশ্যই মানুষের জীবনে এমন আনন্দের প্রাণোচ্ছ্বল অনুষঙ্গ।
আমরা ফারহানার প্রতি আমাদের হার্দিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই।
ইতোমধ্যে দেখলাম এই মেয়েটিও যথারীতি বাঙালি বকধার্মিক নেটিজেনদের কাছ থেকে মারাত্মক বুলিজমের শিকার হয়েছেন। ইউটিউব মোটিভেটরদের ভাবশিষ্য এইসময়ের বিগড়ে যাওয়া প্রজন্ম অশালীন ও অভব্য ভাষায় ফারহানার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করেছে। তারা দাবি করছে, একজন মেয়ে মোটর শোভাযাত্রা করায় তাদের ধর্মানুভূতি বিনষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এসব গালিবাজ প্রজন্মকে সাইবার অপরাধের দায়ে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাই।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গায়ে হলুদের দিনে শহরজুড়ে বন্ধু-বান্ধব ও সাথীদের নিয়ে বাইক র্যালি (মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা) করলেন কনে। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছেন যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ। গত ১৩ আগস্ট গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ঘিরে এমন আয়োজন করেন ফারহানা।
ফারহানা জানান, সবাই নেচেগেয়ে উদযাপন করেছি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি তাই বাইক চালিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ব্যতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকেই এমন আয়োজন। এটি আমার নিজস্ব উদ্যোগে করেছি। অনেক আনন্দ করেছি বন্ধু-বান্ধব ও সাথীরা।
ফারহানা আফরোজের বাড়ি যশোর সার্কিট হাউজের সামনে। যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে যশোর আব্দুর রাজ্জাক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এখন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) থেকে এইচআর-এ এমবিএ করছেন ফারহানা।
ফারহানা আফরোজ জানালেন, ২০০৭ সাল থেকে তিনি বাইক চালান। বিয়ের অনুষ্ঠানকে ব্যতিক্রমী করতে ভিন্নধর্মী ভাবনা তার মাথায় ছিল। এই ভাবনা থেকেই তিনি এমন আয়োজন করেছেন। বিয়ে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই নেচেগেয়ে উৎসব করেছেন। আমি যেহেতু বাইক চালাতে পারি; তাই বাইক চালিয়েই গায়ে হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে এন্ট্রি দেয়ার পরিকল্পনা করেছি।
গত ১৩ আগস্ট ছিল ফারহানার গায়ে হলুদ। পরদিন ১৪ আগস্ট বিয়ে। ছেলে হাসনাইন রাফি পাবনার কাশিনাথপুরের বাসিন্দা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন রাফি ঢাকার গাজীপুরে কর্মরত।
এ বিয়ের অনুষ্ঠান ক্যামেরায় ধারণ করা নাহরুল হায়াত তরু (খান সাহেব) জানালেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ক্যামেরায় কাজ করছেন। কিন্তু এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে-গায়ে হলুদের আয়োজন দেখেননি। এই গায়ে হলুদের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই তার কাছে ফোন করছেন।
শেষে ফারহানার জন্য রাবীন্দ্রিক এই নৈবেদ্যটি ডেডিকেটেড করা থাক…
আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,
দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে।|
পান করি রবে শশী অঞ্জলি ভরিয়া–
সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতি–
নিত্য পূর্ণ ধরা জীবনে কিরণে।|
বসিয়া আছ কেন আপন-মনে,
স্বার্থনিমগন কী কারণে?
চারি দিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি,
ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি
প্রেম ভরিয়া লহো শূন্য জীবনে।|
তথ্যসূত্র:জাগো নিউজ২৪.কম