প্রথম ভাগে, বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরির উদ্দেশ্য ছিল উদ্ভিদ সংগ্রহ, পরিচর্যা আর সেই উদ্দিষ্ট্য ধারণাকে মাথায় রেখেই ৩৪০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর অন্যতম চিন্তাবিদ অ্যারিস্টটল এর হাতে ইতিহাসের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনের যাত্রা শুরু হয়। যার সূত্র ধরেই ছোট বড় বেশিরভাগ দেশেই বর্তমানকালে বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরির ঐতিহ্য এবং প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সময়টা ছিল মিষ্টি রোদেলা ও শীত মৌসুম। সমুদ্রের মৃদুমন্দ বাতাসের ছন্দে সিডনির রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন ছিল আমার কাছে এক অবিস্মরণীয় দিনের আবিষ্কার। প্রকৃতি যখন সঙ্গী হয়ে ওঠে তখন অন্য সকল সঙ্গ, সৌন্দর্য যেন ঠুনকো হয়ে দাঁড়ায়।
১৮১৬ সালে গভর্নর ‘ল্যাচলান ম্যাকোয়ারি’ ৭৪ একর জমির উপর সিডনির রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন তৈরীর উদ্যোগ নেন। এই গার্ডেনের বিস্তৃতি বর্তমানে ১৩০ একর ছাড়িয়েছে।
শুরুতে বোটানিক্যাল গার্ডেন এর উদ্দেশ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা হলেও পরবর্তীতে বহুবিধ গবেষণার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে বিল্ডিং গার্ডেন, হারবেরিয়াম, ডিজিটাল বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং আর্ট গ্যালারির মতো বিশাল গবেষণাগার তৈরি হয়েছে। আর এই গবেষণাগার থেকে নিবিড় পরিচর্যা, পর্যবেক্ষণ এবং নীরিক্ষণের মাধ্যমে উপলব্ধ তথ্য, উপাত্ত ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে যে ফলাফল বেরিয়ে এসেছে তাহলো গাছপালার গুরুত্ব এবং মূল্যায়ন কতটা মুখ্য বিষয়।
প্রকৃতির ভারসাম্যের অন্যতম অকৃত্রিম বন্ধু গাছ। এই গাছপালা আমাদের যেমন খাবার দেয়, ওষুধ দেয়, পশু পাখিকে মায়ের মমতায় আশ্রয় দেয়, বৃষ্টি দেয়, অক্সিজেন দেয় সর্বোপরি গাছপালা ছাড়া আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ তথা প্রাণের কোনো অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না।
দুপুরের ঠিক আগ মুহূর্তে ঝলমলে এক দিনের শুরুতে আমি পৌঁছেছিলাম রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেনে। গার্ডেনের প্রবেশ মুখেই চমৎকার এক কৃত্রিম ঝর্ণাধারা প্রবহমান আর পাশেই প্রশস্ত লোহার অত্যাধুনিক গেটের অভ্যর্থনায় শুরুতেই একটা রাজকীয় আবেশ মনের মধ্যে অন্যরকম অনাবিল প্রশান্তির গুঞ্জরণ তৈরি করে। ঢুকতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় সবুজ দিগন্ত, ছোটছোট লেক আর রংবেরঙের ফুলের সমারোহে। পৃথিবীর নানা জাতের ক্যাকটাসের আলাদা আলাদা কর্নার দেখে আমি মোহিত হই। তালগাছ সমান একেকটা ক্যাকটাস! কী দুর্লভ সব ক্যাকটাস ফুল! ছোটছোট নরম পাঁপড়ির গোছা ধরা নিত্যনতুন অপরিচিত ফুল গাছ আমাকে আমোদিত করে। আমি ভাবাবেগে হারিয়ে যাই অন্য এক নৈসর্গিক জগতে।
সুন্দর একটা রয়েল ট্রেন আমাকে একটা কর্নার থেকে তুলে নেয় এবং পুরো গার্ডেনটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়।
মাঝে মাঝে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্থাপত্য ইতিহাসকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে এই গার্ডেনটি একটা কাব্যিকতার পত্র লেখনের বায়না তুলে ধরল লেখকের কাছে। আর আমি সেই বায়না পূরণ করতেই আজ বসেছি আমার সেদিনের রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন সিডনির ভ্রমণ বিত্তান্ত জানাতে।
এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি শুধুমাত্র মনোরঞ্জন, মনোভঞ্জন আর সৌন্দর্য পিপাসুদের আকাঙ্ক্ষায় মেটায় না, একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুরিজ্যম গড়ে উঠেছে।
শাহানা চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়া থেকে