সোহাগ মিয়া গোয়ালন্দ রাজবাড়ী প্রতিনিধি ঃ রাজবাড়ী জেলার মাটি ধনিয়া চাষে উপযোগী ও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় ধনিয়া চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। ক্ষেতে ধনিয়ার ভালো ফলন দেখে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
রাজবাড়ী জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে এখন ধনিয়া চাষাবাদ করছেন প্রান্তিক চাষীরা।
চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় ধনিয়া চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা অর্জিত হওয়ার পথে। এ বছর রাজবাড়ীতে ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ধনিয়ার আবাদ হয়েছে। যা গত অর্থ বছরে ছিলো ১৫৩৬ হেক্টর।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলার সদরে ৭৭০ হেক্টর,গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩৪২ হেক্টর,পাংশা উপজেলায় ৩৩ হেক্টর,কালুখালী উপজেলায় ৮৫ হেক্টর এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ধনিয়ার আবাদ করেছেন চাষীরা। এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ১ হাজার ৬৫৬ মেট্রেক টন ধনিয়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত অর্থ বছরে ছিলো ১৭০০ মেট্রিক টন।
প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে দিনব্যাপী মাঠে ধনিয়া চাষাবাদে কঠোর পরিশ্রম করছে কৃষক। তবে , চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত দামে ধনিয়ার বীজ ক্রয়,জমি প্রস্তুত,জমিতে সেচ দিতে জ্বালানী তেলের অতিরিক্ত দাম ও শ্রমিকের অধিক মজুরী প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে চাষীরা।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ৩০-৩৫ মন ধনিয়া হয়। ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি করা যায় দেড় লাখ টাকায়। ধনিয়া ৪০দিনের ফসল। ৪০দিনে এর চাষ করে বিক্রি করা যায়।এক জমিতে কয়েক বার ধনিয়া চাষ করা যায়। এক জমিতে বিভিন্ন ভাবে বছরে চার বার রবি শস্য চাষ করা যায়। এক বিঘা জমিতে ধনিয়া চাষ করে কৃষক যে লাভ পেয়ে থাকেন অন্য কোন ফসলে এত ভাল লাভ তারা পান না।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের পাটুরিয়ার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, একরের পর একর জমিতে শুধু ধনিয়ার চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ চাষী উচ্চ ফলনশীল জাতের ধনিয়ার চাষাবাদ করছেন।
কথা হয় ধনিয়া চাষী মোঃ আলতাফ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ২২ শতাংশ জমিতে ১ পাকি। আমি বর্তমানে ১ পাকি জমিতে ধনিয়ার চাষ করেছি। ২০ শতাংশে ৩ মণ ধনিয়ার ফলন আশা করছি। গত বছর বাজারে প্রতি কেজি ধনিয়া ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। এবছর ভালো দাম পাবো বলে আশা করি।
আরেক ধনিয়া চাষী পিন্টু সেখ বলেন, আমি ২ পাকি জমিতে ধনিয়ার চাষ করছি। ধনিয়া চাষ করে অনেক চাষী লাভবান হয়েছেন। ধনিয়া স্বল্প সময়ের ফসল। বাজারে ধনিয়ার চাহিদা অনেক বেশি তাই এর জন্য ভাল দাম পেয়ে থাকেন কৃষকরা।
ধনিয়া চাষী দিপক কুমার দাস বলেন, আমি ১ পাকি জমিতে হাইব্রীড ধনিয়ার চাষ করেছি। গত বছর ধনিয়া চাষ করতে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক লোকসান হয়েছে। এ বছর ধনিয়ার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি গত বছরের লোকসান এ বছর পুষিয়ে নিতে পারবো।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী মোঃ যাইদুর রহমান জানান, রাজবাড়ী জেলা ধনিয়া চাষে বিখ্যাত। আমরা নিয়মিত এ অঞ্চলের চাষীদের ধনিয়া চাষাবাদে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি চাষীদের খোজ খবর রাখি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ধনিয়ার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা একটা কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা। এ উপজেলায় মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৯৪ হেক্টর। বালিয়াকান্দি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮৫ হেক্টর জমিতে ধনিয়ার চাষাবাদ হয়েছে। বালিয়াকান্দিতে কৃষকেরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ধনিয়ার চাষাবাদ করেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সহ আমরা সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের কে নতুন প্রযুক্তি যার ফলন বেশি সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ধনিয়ার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। এবছর রাজবাড়ীতে ১ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে ধনিয়ার আবাদ হয়েছে। এ বছর রাজবাড়ীতে ১৬৫৬ মেট্রিক টন ধনিয়ার উৎপাদন হবে আশা করা হচ্ছে। কৃষকের পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে তারা যেন লাভোবান হতে পারে সেই কামণা করি।