গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি।
নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার একমাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বিরুদ্ধে। হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ না করেই অর্থ লোপাট, সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়ার নামে চলছে বড় ধরনের বাণিজ্য,
হাসপাতালের জেনারেটরের তেলের টাকা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি বছর লোপাট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা । এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হেড এসিস্ট্যান্ট কাম একাউন্টটেন্ট লিপি আক্তার এবং এমনই অভিযোগ হাসপাতালের অধিকাংশ স্টাফদের ।
এছাড়া অধিকাংশ নার্স ও স্টাফ অভিযোগ করে বলেন, করোনা কালীন প্রণোদনার টাকার ব্যাপারে তাদের সই নিলেও কোন রকম অর্থ দেওয়া হয়নি। লক্ষি নামে একজন নার্স অভিযোগ করে বলেন, করোনা রোগীর রুমে ডিউটি করে সে করোনা পজিটিভ হলেও কোন প্রণোদনার অর্থ পাননি। হাসপাতালে কোন আপ্যায়ন বিল না থাকায় মাঝে কিছু স্টাফের কাছ থেকে মাসে কিছু টাকা নিয়ে কেউ আসলে আপ্যায়ন করা হতো।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি এই উপজেলার এক লক্ষ বারো হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল। হেড এসিস্ট্যান্ট কাম একাউন্ট হওয়ার সুবাদে তার হাতেই থাকে সকল প্রকার ফাইল ও কাজের হিসাব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাসপাতালটিতে যেখানে সেখানে ময়লার স্তূপ । এই প্রকল্পে গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ছয় লক্ষ টাকার অধিক অর্থ বরাদ্দ থাকলেও নামে মাত্র কিছু কাজ করে পুরো অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ লিপি আক্তারের বিরুদ্ধে । ইদানিং গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র স্বপ্রনোদিত হয়ে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে হাসপাতাল পরিস্কার রাখার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কম থাকায় পৌরসভা থেকে তিনজন লোক দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালের চত্বরে ময়লা আবর্জনা থাকায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হচ্ছে পৌরসভার পক্ষ থেকে।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা- এ পাঁচটি মৌলিক চাহিদা সরকারের কাছে সেবা হিসেবে পাওয়া মানুষের রাষ্ট্রীয় অধিকার। এর মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। মানুষের জন্মগত এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সেবা প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে। কিন্তু কিছু অর্থলোভী ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায় উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এক জনের হাতেই রয়েছে সমস্ত কিছু। কাগজ কলমে দায়িত্বভার থাকার কথা উপজেলার আর এম ওর কিন্তু তিনি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন। তার রুমে পর্দাটি পর্যন্ত নেই । বর্তমানে দুর্নীতির ভারে নুয়ে পড়েছে হাসপাতালটি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে বরাদ্দ দেখিয়ে হাসপাতালের কোয়ার্টার ভাড়া দেওয়া হচ্ছে অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারির নামে। এমনকি মৃত এক কর্মচারির নামে ও রয়েছে ফ্ল্যাট ভাড়া। মাত্র ছয় সাতটি কোয়ার্টারের ভাড়া সরকারি খাতায় লিপিবদ্ধ থাকলেও বাকি স্ট্যাফদের বেতন থেকে প্রায় চল্লিশ -পঞ্চাশ হাজার টাকা তিনি নিজ হাতে অর্থ আদায় করেন এই হেড এসিস্ট্যান্ট কাম একাউন্টেন্ট। নিজ হাসপাতালে তিনি বড় বাবু নামে পরিচিত। সরকারি কোয়াটারের একটি ফ্লাট ব্যবহার করে এক রুমের ভাড়া দিচ্ছে ডাক্তার,নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। কিন্তুু তাদের কাছ পুরো কোয়ার্টারের ভাড়া নিচ্ছে এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স। ভুক্তভোগী নার্স বলেন বারবার দরখাস্ত করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আর কোয়ার্টার ময়লা আবর্জনায় ভরা। হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবহার না করে তেল বাবদ প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা বিল করেও টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
টিএ ডিএ টাকার ভাগ না দিলে বিল করেন না তিনি। টাকার বিলবোর্ডের ব্যানার থাকলেও কোন বিলবোর্ড নতুন করে করা হয়নি। এতিমদের জন্য পনের হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও পুরো অর্থ তিনি মেরে দেন।আপ্যায়ন বিল থাকলেও কোন আপ্যায়ন করা হয় না বলে অভিযোগ করেন হাসপাতালের ডাক্তাররা। এছাড়াও করোনা কালীন টিকার প্রণোদনার আট লাখ টাকার তিনি নিজে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন এবং তার বোন নার্গিস পারভীন চল্লিশ হাজার টাকা। এটাকাও এখনো কাউকে দেওয়া হয়নি তার একাউন্টে জমা রয়েছে। হাসপাতালে অপারেশনের সময় জেনেরেটর চালানো না হলেও তারা বিকেলে বসে ভূয়া বিল ভাউচার করার সময় জেনেরেটর চালান।
এব্যাপারে হেড এসিস্ট্যান্ট কাম একাউন্টেন লিপি আক্তার কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান আমি বিল ভাউচার করি কিন্তু সেগুলো সই করেন হাসপাতালের দ্বায়িত্ব প্রাপ্তরা। তাছাড়া হাসপাতালের কোয়ার্টার ভাড়ার টাকার ব্যাপারে তিনি সদুত্তোর দিতে পারেন নি। তাছাড়া টাকা না দিলে বিল ভাউচার হয় না এ ব্যাপারে সহ অন্যান্য দুর্নীতীর ব্যাপারে বলেন ভুল হলে সময় দেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সৈয়দ মোঃ আমিরুল হক বলেন কিছু অনিয়ম হচ্ছে জানি চেষ্টা করছি সেগুলো ঠিক করে ফেলতে। সাপ্তাহিক নিয়মিত মিটিংয়ে সবার খোলাখুলি মতামত নেওয়া হচ্ছে। করোনা কালীন প্রণোদনার টাকার ব্যাপারে জানতে তিনি বলেন সেটা এখনো দেওয়া হয়নি একটু যাচাই-বাছাই করতে সময় নিচ্ছি খুব শীঘ্রই টাকা বিলি বন্টন করা হবে। তিনি আরও বলেন পরিবারের সবাই সমান হয়না একটু সময় দিলেই সবাইকে ঠিক করে ফেলবো।
রাজবাড়ী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন আমি গত সপ্তাহে হাসপাতাল ভিজিট করে এসব ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। তাছাড়া মৃত ব্যাক্তির নামে কোয়ার্টার ছয়মাস পর্যন্ত রাখার বিধান আছে। তাছাড়া প্রণোদনার টাকা শুধু মাত্র যারা টিকা প্রদান করেছে তাদের দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া গত জুলাই মাসে যে প্রণোদনার টাকা আসছে সে ব্যাপারে গোয়ালন্দ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে বক্তব্য নিতে বলেন।