স্টাফ রিপোর্টার,
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর শাখা ক্যানেল ঘাট এলাকার সাত গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো।
সাঁকোর মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদীর শাখা। এর ওপর নির্মিত হয়েছে বাঁশের সাঁকো। আর এই সাঁকো দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ৭টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এলাকাবাসী জানান, সাত গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের পারাপারে একমাত্র ভরসা এই একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ১০ বছর ধরে এলাকাবাসী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মিলে সাঁকোর বাঁশ পচে নষ্ট হলে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন তারা।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোতে চলাচলের সময় সাঁকোটি কাঁপছে। আবার অনেক স্থানে বাশঁ-খুঁটি পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাঁশ পঁচে যাওয়ায় সাঁকো দিয়ে অনেক কষ্টে ও সাবধানতায় অবলম্বন করে পারাপার হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে কৃষি পন্য নিয়ে কৃষক সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে না পারায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাঁকোটির অনেক স্থানে বাঁশ পঁচে যাওয়ার কারনে স্কুলগামী ছাত্র ছাত্রীদের অনেকে কষ্টে ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি পারাপার হতে হচ্ছে। সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং বেপারি পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, লালু মন্ডল পাড়া, নতুন পাড়া, ইদ্রিস পাড়া, নাসীর সরদার পাড়া, ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী বাজার এলাকা সহ ৭ টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
সাঁকো পার হওয়া দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার বলেন, বাঁশের সাঁকোটি বেশিরভাগ অংশে পচে যাওয়ার কারণে নরবরে হয়ে গিয়েছে। সাঁকো দিয়ে পার হতে গেলে অনেক ভয় পরে যে কখন নদীতে পড়ে যাই। এখানে একটা ব্রিজ হলে আমাদের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুবিধা হয়। সাঁকোর এপারে স্কুল না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়।
সাঁকো পার হওয়া রিকশাচালক রহিম বেপারী জানান, আমাদের ইনকামের একমাত্র পথ রিক্সা রিক্সা টি আমাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে চার্জ দিতে পারি না। পরের গ্যারেজে টাকা দিয়ে চার্জ দিতে হয় এ জন্য আমাদের ইনকাম অনেক কমে যায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি। এখানে একটা ব্রিজ আমাদের খুবই প্রয়োজন।
ইদ্রিস পাড়া গ্রামের জলিল মুন্সী বলেন, খালের ওপর আমাদের সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। বারবার তাগিদ দেওয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনে জেতার পর আর কারও মনে থাকে না। আমরা ভারি কোন মালামাল নিয়ে সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারিনা। আমরা অনেক ভোগান্তির মধ্যে আছি।
দৌলতদিয়া ইউপির ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আয়ুব আলী খান বলেন, এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি একটি ব্রিজের। আমিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই স্থানটিতে একটি ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। যেন এই এলাকার মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, এলাকাবাসীর দাবী ও জনগণের দুর্ভোগ কমানোর জন্য অতি দ্রুত বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ব্রীজ নির্মাণ করার ব্যবস্থা করা হবে।