সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ :
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নিউ আয়েশা রহমান হাসপাতালের মালিক মিজানুর রহমান চিকিৎসক না হয়েও নিজেই এক প্রসূতির অপারেশন করেছেন। এতে নিলুফা আক্তার নামে (২৯) ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে এক লাখ টাকায় আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর প্রসব বেদনা নিয়ে নিউ আয়েশা রহমান হাসপাতালে ভর্তি হন নিলুফা আক্তার। ওই দিন রাতে তার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। হাসপাতালের মালিক মিজানুর রহমান তার অপারেশন করেন। পরদিন রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকার হেলথ কেয়ার নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিলুফার মৃত্যু হয়। নিহত নিলুফা আক্তার সদর উপজেলার সোনাকান্দা গ্রামের মো. টুকু মিয়ার মেয়ে এবং সিংগাইর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের মো. আক্কাসের স্ত্রী।
মৃত নিলুফা আক্তারের হাসপাতালের ফাইল ঘেটে দেখা যায়, ডাক্তার আরিফুর রহমান তার অপারেশন করেছেন। আর অজ্ঞান ডাক্তার হিসেবে ছিলেন সারোয়ার হোসেন। তবে ডাক্তার আরিফুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি এই অপারেশন করেননি। এমনকি এই অপারেশনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই অপারেশন করে ফাইলে ডাক্তার হিসেবে তাঁর নাম উল্লেখ করায় এর কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।
আর এনেসথেসিয়া (অজ্ঞান) ডাক্তার সারোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নিলুফার বোন লিপি আক্তার বলেন, আমার বোনকে যেদিন অপারেশন করা হয়, সেদিন আমি সঙ্গে ছিলাম। অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) একজন নার্স, হাসপাতাল মালিক মিজানুর রহমান ও আরো একজন লোক ছিল।
হাসপাতাল মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ডাক্তার আরিফুর রহমানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। তাদের কোন অভিযোগ নেই।
নিলুফার বাবা মো. টুকু মিয়া বলেন, হাসপাতালের মালিক মিজানুর রহমান ডাক্তার না হয়েও অপারেশন করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। নিলুফা হত্যার বিচার দাবি করেছেন তার বোন লিপি আক্তার ও ভাই রাকিবুল ইসলামসহ সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দারা।
মানিকগঞ্জের পশ্চিম দাশড়া এলাকার রমজান আলী সড়কের রাফিজা ভবনটিই নিউ আয়েশা রহমান হাসপাতাল। এ হাসপাতালে কোনো মেডিকেল অফিসার বা আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। হাসপাতাল মালিক মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাক্তার লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, সিভিল সার্জন আমাকে প্রসিকিউশন দিলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া রোগীর স্বজনরা আমাকে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। এমনকি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।