স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নুরু মন্ডলের পাড়ার হোমিও চিকিৎসক শহিদুল ইসলামের মেয়ে এসএসসি পরিক্ষার্থী শান্তা খাতুন (১৬)। তার সপ্ন ছিল পড়ালেখা করে পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়বে। কিন্তু বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে অসময়ে বসতে হয়েছিল বিয়ের পিরিতে। প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারণে বিয়ের পরেও পড়ালেখা করে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবারের এসএসসি পরিক্ষায়।
কিন্তু তা আর হলোনা, শান্তা এ বছর গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুল হতে এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম দুটি পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারলেও গত সোমবার বাচ্চা জন্ম দেয়ায় মঙ্গলবারের (২৪ নভেম্বর) শেষ পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন আলাপকালে শান্তার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু বখাটে ছেলের উৎপাত হতে রক্ষা পেতে এবং আমার মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের ইচ্ছে পূরন করতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ৯ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় অসময়ে আমরা শান্তাকে বিয়ে দেই। বিয়ের পরও সে প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তির জোরে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল।
এরই মধ্যে শান্তার গর্ভে সন্তান আসে। অনেক কষ্ট করে সে গত ১৫ ও ২১ নভেম্বরের ইতিহাস ও ভূগোল পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে ।এরপর( ২২ নভেম্বর) সোমবার বিকেলে শান্তা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। এতে প্রচন্ড শারিরীক দূর্বলতার কারনে ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার শেষের ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এসময় আলাপকালে শান্তা খাতুন জানান, আমার খুব ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করার। এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ার। কিন্তু তা আর হলো না। খুব ইচ্ছে ছিল শেষ পরিক্ষাতেও অংশ নেবার। কিন্তু শারিরীক দূর্বলতা ও পরিবারের লোকজনের বাঁধায় তা আর হলো না। তবে চেষ্টা করবো আগামীবার আবারো পরিক্ষায় অংশ নেয়ার। কিন্তু পারব কিনা জানি না। আপাতত আমার মেয়েই আমার সব। ওকে ঘিরেই আমার সকল স্বপ্ন।
গোয়ালন্দ উপজেলার এসএসসির কেন্দ্র সচিব মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর গোয়ালন্দ উপজেলা হতে ১হাজার ১শ ৪৫জন পরিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ফরম পূরন করার পরও ১৮জন ছাত্রী পরিক্ষায় অংশ নেয়নি। আমার ধারনা এদের প্রায় সবাই শান্তার মতো বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক বিষয়।
গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্ষ পরিদর্শন করতে গিয়ে জানতে পারি বাচ্চা জন্ম নেয়ায় শান্তা নামের ওই পরিক্ষার্থী শেষ পরিক্ষায় অংশ নিতে পারে নি।বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করছি বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে।কিন্তু নানা কারনে তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।