স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া -পাটুরিয়া নৌরুটে গত কয়েকদিন ধরে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়ে আসছে। দুই দিন আগে আসা গাড়ি দুইদিন পরে পার হচ্ছে। এ কারণে রাস্তাতেই চালক, চালকদের সহযোগীদের রাত কেটে যাচ্ছে।ঘাট স্বল্পতা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকায় এই সমস্যা বলছে ঘাট কতৃপক্ষ। তবে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত শেষ হবেনা বলে মনে করছেন তারা।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ৩ কিলোমিটার এলাকায় পারের অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন যাত্রীবাহি বাস ও পণ্যবাহি ট্রাক। মাঝেমধ্যে যানবাহনের সারি ৫-৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে।তবে এর মধ্যে পণ্যবাহি ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহন (বাস) গুলোকে ফেরি পেতে ৪থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগলেও প্রতিটা পণ্যবাহী ট্রাক গুলোকে ১ থেকে ৩ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পেতে।
এতে করে গাড়িতেই নির্ঘুম রাত কেটে যাচ্ছে চালক, চালকদের সহোযোগি ও গণপরিবহনের যাত্রীদের। দূর্ভোগ যেন শেষ হয়না ঘাট পারি দিতে আসা এসব চালক, যাত্রীদের। এরপরে আবার মহাসড়কের পাশে খাওয়াদাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না বলে জানান তাঁরা। বিভিন্ন সময় মোবাইলসহ ব্যাগ ছিনতাই হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
যশোর থেকে ফিড ভর্তি কাভার ভ্যান (ট্রাক) নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চালক সাব্বির মোল্লা। তিনি বুধবার সন্ধার পর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পরেন।সেখান থেকে শুক্রবার ভোর ঘাটের দিকে এসে দুপুর দেড়টার দিকে তিনি ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। অর্থাৎ, প্রায় ২ দিন সিরিয়ালে থেকেও ফেরির দেখা পাননি তিনি। এখনও ফেরি পেতে আরো ৭-৮ ঘন্টা লাগবে বলে জানান ওই ট্রাকচালক।
বেনাপোল থেকে নারায়ণগঞ্জ গামী ট্রাকের চালক চাঁন মিয়া জানান, শুক্রবার ভোরে ঘাট এলাকায় আসেন তিনি। প্রায় ১২ ঘণ্টায় তিনি ঘাট এলাকার লঞ্চ ঘাট টার্নিং পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো! এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও ৫ শতাধিক ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আটকায় আছে। যাত্রীবাহী গাড়ির সঙ্গে পাশাপাশি কিছু পণ্যবাহী গাড়িও ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত।’
ফেরিঘাট সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে যানজটে আটকা চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পূর্বাশা পরিবহনের চালক জিয়া ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ঘাটে এসে কোন যানজট না পেয়েই ফেরিতে উঠতে পারতাম।ট্রাকের সিরিয়াল এবং গণপরিবহনের সিরিয়াল আলাদা থাকতো।কিন্তু কিছুদিন যাবত লক্ষ করছি ট্রাকের সিরিয়াল আলাদা থাকলেও দুইলাইন করে বাসের সাথেও ট্রাকের সিরিয়াল করা হচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা সময়ময় অফিসে পৌছাতে পারেনা। তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আগের ব্যবস্থার দাবি জানান।
বরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে আসা আশরাফুল আলম নামের এক যাত্রী বলেন, মাঝে মধ্যেই ঢাকা যেতে এই রূট ব্যবহার করি। আগে বাসের লাইনে কোন ট্রাক দেখতাম না। কিন্তু আজ বাসের লাইনে ট্রাক দেখে অবাক তিনি। কাজের জন্য সময়মত ঢাকা পৌছানো হবে না বলে জানান তিনি।দেরিতে পৌছানোর ফলে তাকে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলে তিনি জানান।
গোল্ডেন লাইনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্তাবধায়ক আবুল কালাম জানান, আগে বাস এবং ট্রাকের আলাদা সিরিয়াল থাকতো কিন্তু এখন তা আর থাকেনা।এতেকরে যাত্রীদের আলাদা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন, দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে চালু রয়েছে পাঁচটি। বাকি ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এখনো চালু হয়নি। বাকি পাঁচটি ঘাটের মধ্যে ৩ নম্বর ছোট ফেরির পন্টুন সরিয়ে সেখানে রো রো ফেরির পন্টুন বসানো হয়। এছাড়া আরো একটি ঘাট রো রো ফেরির জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই সঙ্গে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ। এ কারণে ওই নৌপথের গাড়ি এই নৌপথ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি চাপ থাকছে। আরও একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে বলে তিনি জানান। দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট বড় মোট ১৬ টি ফেরি চলাচল করছে বলে তিনি জানান।